বিসিএস ভাইভায় ভালো করতে হলে

সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩৭তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলতি মাসের ২৯ তারিখ শুরু হবে। এই পরীক্ষার আগে প্রস্তুতি কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন ৩৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী শাহ মো. সজীব।

ক) ২০০ নম্বরের মধ্যে যদি আপনি ৫০ শতাংশ নম্বর মানে ১০০ পান তবে পাস করেছেন। এতে ক্যাডার আসবে কি না বলা যায় না। তবে নন-ক্যাডার লিস্টে নাম থাকবে আর-কি! এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, ভাইভাতে শুধু ভাইভার দিকগুলোই প্রভাব ফেলে। কারণ, লিখিতের কোনো নম্বর সামনে থাকে না।

খ) পোশাক ছেলেরা স্যুট-টাইসহ ফরমাল পরবেন। সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট উত্তম। মেয়েরা মানানসই শাড়ি পরবেন।

গ) বোর্ডের চেয়ারম্যান বা সদস্য নারী হলেও স্যার বলে সম্বোধন করবেন। আর পুরুষদের তো স্যারই বলবেন।

ঘ) আপনার গলার স্বর কখনো অধিক উচ্চ বা অধিক নিম্ন হবে না। আদর্শ মান বজায় রেখে কথা বলবেন। ৩৫তমতে এক প্রার্থী জোরে সালাম দেওয়ায় বোর্ড রেগে গিয়েছিল। আর একটা বিষয়, কথা বলার গতি খুব দ্রুত বা ধীর যেন না হয়। এতে বিরক্ত হয় অনেকে। কথার মাঝখানে অ্যা, হুম, উহ্ উচ্চারণ করা যাবে না।

ঙ) বাংলা প্রশ্ন বাংলায় উত্তর, ইংরেজি প্রশ্ন ইংরেজিতে উত্তর এবং ইংরেজি-বাংলা মিশ্রিত প্রশ্নের উত্তর মিশিয়েই দেবেন।

চ) ভাইভায় সাধারণত ছয়টি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। যথা- (অ) নিজ জেলা (আ) নিজ পঠিত বিষয় (ই) মুক্তিযুদ্ধ (ঈ) প্রথম পছন্দ (উ) সংবিধান (ঊ) সাম্প্রতিক বিষয়াবলি। এই বিষয়গুলো জোর দিয়ে পড়বেন।

ছ) কিছু প্রশ্ন নিজের মতো করে ইংরেজিতে সাজিয়ে নেবেন। যেমন: নিজ পরিচয়, পরিবার, জেলা, কেন বিসিএস দিচ্ছেন, প্রথম পছন্দ এটি কেন, নিজ বিষয় ও প্রথম পছন্দের সম্পর্ক, বর্তমানে কী করেন, শখ, শৈশব, হল জীবন ইত্যাদি। তবে বলার সময় টানা মুখস্থ বলবেন না।

জ) বিপিএসসি সম্পর্কে খুব ভালো করে জেনে যাবেন। তাদের ওয়েবসাইটে সব আছে। পারলে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্পর্কেও ভালো করে জানবেন। তাঁদের ছবিগুলো মাঝে মাঝে দেখবেন। এতে ভয় কিছুটা কেটে যাবে।

ঝ) ভাইভা বোর্ড হলো বিনয়ের চারণভূমি। অর্থাৎ সারা জীবনের সব বিনয় এখানে এসে ঢেলে দেবেন। অহেতুক তর্ক করবেন না। কারণ, বোর্ডকে খেপালে আপনি শেষ!

ঞ) ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিক ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা থাকা চাই। মুক্তিযুদ্ধের তাত্ত্বিক দিকগুলোও একটু দেখবেন। যেমন: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কী, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন কী ছিল ইত্যাদি। এ জন্য ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেনের বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯০৫-১৯৭১ বইটি পড়া যায়।

ট) সংবিধানের তর্কিত ও আলোচিত বিষয়গুলো একটু সাজিয়ে নেবেন। যেমন: ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ থাকা উচিত কি না, রাষ্ট্রধর্ম কীভাবে দেখেন, কিছু বিষয় সংশোধন অযোগ্য কেন ইত্যাদি।

ঠ) কিছু অভ্যাস করতে পারেন। (অ) আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে কথা বলে দেখবেন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক আছে কি না। (আ) বাংলা ও ইংরেজি শুদ্ধ উচ্চারণ করুন। (ই) ফরমাল পোশাক ট্রায়াল দিতে পারেন যদি অভ্যাস না থাকে। (ঈ) নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ুন। বিখ্যাত কিছু গ্রন্থ পড়ে নেবেন। যেমন: কারাগারের রোজনামচা ইত্যাদি।

ড) অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭ থেকে বাছাই করে বেশ কিছু তথ্য জেনে নেবেন। এ ছাড়া সাধারণ জ্ঞানভিত্তিক মাসিক ম্যাগাজিন ও পত্রিকা থেকে নিজেকে আপডেট রাখবেন। রোহিঙ্গা ইস্যু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ঢ) কথা বলার সময় হাত নাড়াবেন না এবং পা ঝাঁকাবেন না। মাথা প্রয়োজন অনুযায়ী মুভ করবেন। চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসতে যাবেন না। চোখে চোখ করে কথা বলবেন। হাসি হাসি মুখ থাকবে।

ণ) যেদিন ভাইভা সেদিন পত্রিকা অবশ্যই পড়ে যাবেন। সম্ভব হলে তিনটা পড়বেন এবং ওই দিনের বাংলা, ইংরেজি ও আরবি তারিখ জেনে নেবেন।

ত) কিছু টপিকস ভালো করে দেখবেন। যেমন: প্রশাসনসংক্রান্ত প্রশ্ন, অর্থনীতিসংক্রান্ত প্রশ্ন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত কবিতা ও গান, বাংলা ও ইংরেজি বানান, স্থানীয় সরকার, কিছু আইনের প্রাথমিক তথ্য, রাজনৈতিক কিছু তথ্য ইত্যাদি।

থ) বাংলাদেশ ও বিশ্ব মানচিত্র সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে যাবেন। বিশেষ করে যার আয়তন যত ছোট তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বুঝতেই পারছেন কেন!

দ) যেকোনো উত্তরের ক্ষেত্রে ইতিবাচকতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। নেতিবাচকতা অনেকেরই পছন্দ নয়।

ধ) প্রশ্নের উত্তরে কখনো এমন টার্ম ব্যবহার করবেন না, যা সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। কারণ, বোর্ড আপনার উত্তর থেকেও প্রশ্ন বের করবে।

ন) প্রশাসন ও পুলিশ যাঁদের প্রথম পছন্দ, তাঁরা সিআরপিসি, সিপিসি, পেনাল কোড, মোবাইল কোর্ট আইন ইত্যাদি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে যাবেন।

প) ক্যাডার চয়েসের তালিকার ক্রম মনে রাখবেন। অনেক সময় কত নম্বরে কোন ক্যাডার চয়েস দিয়েছেন জিজ্ঞাসা করে।

ফ) সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে নিচের অনুচ্ছেদগুলো ভালো করে পড়তে হবে। যথা: ২(ক), ৩, ৪, ৪(ক), ৫, ৬, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৮(ক) ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৩(ক), ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৯, ৫২, ৫৫, ৫৭, ৫৯, ৬০, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৭০, ৭৬, ৭৭, ৮১, ৮৭, ৯১, ৯৩, ৯৪, ১০২, ১০৬, ১০৮, ১১৭, ১১৮, ১২১, ১২২, ১২৩, ১২৭, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০, ১৪১, ১৪১(ক), ১৪১(খ), ১৪১(গ), ১৪২, ১৪৮, ১৫৩

ব) নিজ বিষয় সম্পর্কে জানতে হলে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ বিষয়গুলোই বেশি জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে। তাই এ জন্য প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের বইগুলো একটু দেখবেন। সম্ভব হলে শিক্ষক নিবন্ধনের প্রযোজ্য গাইডটি সংগ্রহ করবেন।

ভ) অর্জিত জ্ঞান ও বলার সাহসিকতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, অনেক কিছুই আপনার হাতে নেই।

ম) ভাইভা শেষ হয়ে গেলে মনে করে আপনার কাগজগুলো ফেরত নিয়ে আসবেন। উঠে হাঁটা শুরু করবেন না।

সবার পরীক্ষা ভালো হোক। আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা।

Add a Comment