WTO

GATT

শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি (General Agreement on Tariffs and Trade -GATT) অনেকগুলো দেশের মধ্যে একটি আইনি চুক্তি , যার সামগ্রিক উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা যেমন- শুল্ক, কোটা ইত্যাদি কমিয়ে বা নির্মূল করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো। এর প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল ” বিভিন্ন বাণিজ্যিক বাধা যেমন শুল্ক, কোটা ও অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা অনেকাংশে কমিয়ে পারস্পারিক সুবিধা ও সমঝতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালিত হবে। ”

বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান সম্পর্কিত জাতিসংঘ সম্মেলনের সময় এটি প্রথম আলোচিত হয়েছিল এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (International Trade Organization- ITO)নামে একটি সংস্থা তৈরির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পরে ১৯৪৭ সালের ৩০ অক্টোবর জেনেভায় ২৩ টি দেশ GATT সৃষ্টির জন্য স্বাক্ষর করে। ১লা জানুয়ারী ১৯৪৮ এ তা কার্যকর হয়। ১৪এপ্রিল ১৯৯৪ সালে উরুগুয়ের রাউন্ড এগ্রিমেন্টস এর মাধ্যমে এর অবসান ঘটে ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) এর সৃষ্টি হয়। যা ১ জানুয়ারী ১৯৯৫ থেকে কার্যকর হয়। উরুগুয়ের রাউন্ডে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সৃষ্টিতে বিশ্বের ১২৩টি দেশ স্বাক্ষর করে।
১৯৪৭ সালে যেখানে শুল্কের হার ছিল ২২%, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সৃষ্টিতে তা ৫% এ নেমে আসে। তাই বলা যায় GATT এর সফল উত্তরাধীকার হল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)।

Uruguay Round

১৯৮৬ সালে GATT এর মন্ত্রীস্থানীয় ঘোষণায় বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত হয়। সমস্যাগুলোর মধ্যে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, দুটি দেশের বাণিজ্যের কারণে সংশ্লিষ্ট তৃতীয় কোন দেশের অসুবিধা( spill-over impacts) ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য, ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরুগুয়েতে অষ্টম GATT Round শুরু হয়। অষ্টম GATT Round, উরুগুয়ে রাউন্ড হিসাবেও পরিচিত। সেখানে উপর্যুক্ত সমস্যাগুলো ছাড়াও কিছু নতুন বিষয় আলোচনার জন্য যুক্ত হয় যেগুলো GATT এর আওতাভূক্ত ছিল না। যেমন- সেবা বাণিজ্য(trade in services), বুদ্ধিবৃত্তিক মেধাস্বত্ত্ব(intellectual property), বিনিয়োগ নীতি, কৃষি, টেক্সটাইল ইত্যাদি। বলা হয় এটি ছিল বাণিজ্য নিয়ে সর্বকালের সর্ববৃহৎ সমঝোতা।

অষ্টম GATT Round ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষি বাণিজ্যকে কিভাবে সংস্কার করা যায় তাতে একমত হতে না পারায়, আলোচনার সময় বাড়ানো হয়। অবশেষে, নভেম্বর ১৯৯২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ আনুষ্ঠানিকভাবে অপর একটি চুক্তি “ব্লেয়ার হাউস অ্যাডমিন” এর মাধ্যেমে তাদের মধ্যকার মতপার্থক্যগুলো মিটিয়ে নেয়। ফলে ১৫ এপ্রিল, ১৯৯৪ মরোক্কোর মারাকেশে ১২৩ দেশের সরকার স্বাক্ষর করে World trade Organization-WTO প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৮৬ সের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর ধরে এ আলোচনা চলছিল। (২৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ১ জানুয়ারী, ১৯৯৫ থেকে কার্যকর হয়। । এটি GATT এর প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার সবচেয়ে গভীর সাংগঠনিক সংস্কার হিসাবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্যে ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় WTO- World Trade Organization. যা GATT(General Agreement on Tariffs and Trade) এর স্থলাভিষিক্ত হয়।
এর সদর দপ্তর সুজারল্যান্ডের জেনেভায়। (২৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
সংস্থাটির বর্তমান প্রধান- রবার্তো আজেভিদো।
সংস্থাটির মন্ত্রী পর্যায়ের একাদশতম সম্মেলন হবে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে, ১০-১৩ ডিসেম্বর।

বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৬৪ । এটি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে। WTO প্রণীত নীতিসমূহই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভিত্তি। বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
এর প্রধান কার্যাবলীঃ

  • আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য চুক্তিতে সহায়তা
  • বাণিজ্য আলোচনার ফোরাম হিসাবে কাজ করা
  • জাতীয় বাণিজ্য নীতির পর্যালোচনা
  • ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান
  • বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের(IMF, IBRD) নীতির সাথে সমন্বয় সাধন।
  • বিভিন্ন পক্ষের মাঝে বিদ্যমান বিবাদ নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছানো

এটি একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। বিধিবদ্ধ বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সিস্টেম তৈরিতে এটি তিনটি চুক্তি অনুসরণ করে

GATT – 1994 (General Agreement on Tariffs and Trade) – for trade in goods
GATS (General Agreement on Trade in Services) – for trade in services
TRIPs (Agreement on Trade-Related Aspects of Intellectual Property Rights

এই তিনটি ছাড়াও কিছু চুক্তি আছে যেমন কৃষি, SPS, TBT, ইত্যাদি।

WTO এর মূল নীতিঃ
(i) সকল ক্ষেত্রে সব দেশকে সমান সুযোগ দেওয়া , কোন বৈষম্য না করা।
(ii) আমদানি পণ্য ও দেশীয় পণ্যকে সমান বিবেচনা করা
(iii) সকল কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
(iv) সদস্য রাষ্ট্রকে বাণিজ্যের উপর যৌক্তিক বিধিনিষেধ প্রদান ক্ষমতা অর্পণ।

মন্ত্রিস্থানীয় সম্মেলন

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় মন্ত্রিস্থানীয় সম্মেলনে সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এজন্য সংস্থাটি প্রতি দুবছর পরপর মন্ত্রিস্থানীয় সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। ১৯৬৬ থাকে ২০১৭ পর্যন্ত ১১টি সম্মেলন হয়েছে।
1st 9–13 December 1996 Singapore
5th 10–14 September 2003 Mexico Cancún, Mexico (২৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
11th 10–13 December 2017 Argentina Buenos Aires, Argentina
১২তম সম্মেলোন হবে ২০২০ সালে, কাজাখস্তানের আস্তানায় । যা হবে মধ্য এশিয়ায় সংস্থাটির প্রথম বৈঠক।

সমালোচনাঃ

  1. অনেক মনে করেন, WTO পক্ষপাত দুষ্ট, গরিব দেশ- যাদের Negotiation Power কম, তাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। এবং ধনী দেশের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে।
  2. ধনীদেশগুলো গরীব দেশের পণ্যে শুল্ক ও কর আরোপ করে, বা তাদের রপ্তানিতে বাধার সৃষ্টি করে। যেমন পোশাকের ক্ষেত্রে।
  3. যদিও এটি মুক্ত বা অবাধ বাণিজ্যের কথা প্রচার করে কিন্তু কার্যক্ষত্রে তা দৃশ্যমান নয়।
  4. অনেক উন্নয়নশীল দেশ আছে যারা দোহা রাউন্ডের শর্ত পূরণ করতে পারে না।
  5. TRIPs এর কারনে নিজ দেশে উৎপাদিত বিদেশি পণ্য, তারা ব্যবহার করতে পারে না।
  6. অনেক সমালোচক মনে করেন, WTO শ্রমিক ও পরিবেশের কথা চিন্তা না করে নীতি প্রণয়ন করে।
  7. বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধনী দেশের প্রাধান্য।

World Tourism Organization
WTO বা UNWTO(The United Nations World Tourism Organization) এটি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর স্পেনের মাদ্রিদ।

সংস্থাটির ২২ তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় চীনের চেংডু তে। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সভাপতি নির্বাচিত হয়।


👉 Read More...👇
🡸 IAEA FAO 🡺

Add a Comment