ভারত

তথ্য কণিকায় ভারতঃ
অন্যান্য

  1. ভারতের জাতীয় খেলা ফিল্ড হকি।
  2. ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প সমগ্র বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প।
  3. ভারতীয় নৌ-বাহিনী জোরপূর্বক দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ দখল করে নেয়- ১৯৮১ সালে
  4. ভারতের কোন রাজ্যে কিছু সাওতাঁল বাস করে – পশ্চিমবঙ্গ।
  5. ভারতের জাতীয় প্রতীক – অশোক স্তম্ভ
  6. ভারতে উৎপত্তি এরকম বাংলাদেশী নদী—৫৪ টি।
  7. ভারত বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী গঠিত হয়? ২১ নভেম্বর ১৯৭১ সালে

ভারতঃ
ভারত নামটির উৎপত্তি চন্দ্রবংশীয় পৌরাণিক রাজা ভরতের নামানুসারে। কথিত আছে এই বর্ষ বা অঞ্চলটি রাজা ভরতকে দান করা হয়েছিল বলে এর নাম ভারতবর্ষ। ইংরেজি ইন্ডিয়া (India) শব্দটি এসেছে সিন্ধু নদের আদি ফার্সি নাম হিন্দু থেকে।

অবস্থানঃ ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল তথা বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল, ও ভূটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ, মায়ানমার ও মালয়েশিয়া অবস্থিত। এছাড়া ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের

সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশালাকার একাধিক সাম্রাজ্য। নানা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যপথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত। খ্রিষ্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলাম এদেশে প্রবেশ করে, ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। অতঃপর এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।

বর্তমানে ভারত ২৯টি রাজ্য ও সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিশিষ্ট একটি সংসদীয় সাধারণতন্ত্র। ভারতীয় অর্থব্যবস্থা বাজারি বিনিময় হারের বিচারে বিশ্বে দ্বাদশ ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার বিচারে বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম। ১৯৯১ সালে ভারত সরকার গৃহীত আর্থিক সংস্কার নীতির ফলশ্রুতিতে আজ আর্থিক বৃদ্ধিহারের বিচারে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলির মধ্যে দ্বিতীয়। তবে অতিমাত্রায় দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও অপুষ্টি এখনও ভারতের অন্যতম প্রধান সমস্যা। সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারত একটি বহুধর্মীয়, বহুভাষিক, ও বহুজাতিক রাষ্ট্র। আবার বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের নানা বৈচিত্র্যও এদেশে পরিলক্ষিত হয়।

খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রতিষ্ঠিত ও মহামতি অশোকের শাসিত মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার সিংহভাগ অঞ্চল একত্রিত হয়। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে গুপ্ত সম্রাটদের শাসনকাল প্রাচীন ভারতের সুবর্ণ যুগ নামে আখ্যাত হয়। এছাড়া পূর্ব ভারতে পাল এবং দাক্ষিণাত্যে চালুক্য, চোল ও বিজয়নগর প্রভৃতি সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এই সকল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পকলা, সাহিত্য, জ্যোতির্বিদ্যা ও দর্শন সমৃদ্ধি লাভ করে।

খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটে। এর ফলে সমগ্র উত্তর ভারত প্রথমে সুলতানি ও পরে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। মহামতি আকবরের রাজত্বকালে দেশে একাধারে যেমন সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচনা হয়, তেমনই প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দু-মুসলমানের ধর্মীয় সম্প্রীতি। ক্রমে ক্রমে মুঘল সম্রাটগণ উপমহাদেশের এক বৃহৎ অংশে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনে সক্ষম হন। যদিও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রাধান্যকারী অসমের অহোম রাজশক্তি এবং আরও কয়েকটি রাজ্য মুঘল আগ্রাসন সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিল।

ষোড়শ শতক থেকে পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপীয় শক্তিগুলি ভারতে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করতে শুরু করে। পরবর্তীকালে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলযোগের সুযোগ নিয়ে তারা ভারতে উপনিবেশ স্থাপন করতেও সক্ষম হয়। ১৮৫৬ সালের মধ্যেই ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তগত হয়েছিল। এর এক বছর পরেই ঘটে ভারতীয় সিপাহি ও দেশীয় রাজ্যগুলির সম্মিলিত এক জাতীয় গণ-অভ্যুত্থান। ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বা সিপাহি বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও তা দেশে কোম্পানির শাসনের দুর্বলতার দিকগুলি উন্মোচিত করে দেয়। তাই ভারতকে আনা হয় ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে।

বিংশ শতকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলি দেশজুড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। ভারতীয় নেতা মহাত্মা গান্ধী লক্ষাধিক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অহিংস গণ-আইন অমান্য জাতীয় আন্দোলন শুরু করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষলগ্নে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম ভারতের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটিশ শাসনজাল থেকে মুক্তিলাভ করে। একই সঙ্গে দেশের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মুসলমান-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি বিভক্ত হয়ে গঠন করে পাকিস্তান রাষ্ট্র। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি নতুন সংবিধান প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে ভারতে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়।

স্বাধীনতার পরে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, জাতপাত, নকশালবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভুত্থান দেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৯০-এর দশক থেকে ভারতের শহরাঞ্চলগুলি এই হানাহানির শিকার হতে থাকে। ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের ফলে চীনের সঙ্গে এবং ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ তীব্র হয়। ভারত রাষ্ট্রসংঘ (ব্রিটিশ ভারত হিসাবে) ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৭৪ সালে একটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষণ ও ১৯৯৮ সালে আরও পাঁচটি পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে ভারত নিজেদের একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশ করে। ১৯৯১ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে বর্তমানে পৃথিবীর অতিদ্রুত-বর্ধনশীল এক অর্থব্যবস্থা হিসাবে ভারত সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতেও সক্ষম হয়েছে।

লোকসভা
লোকসভা ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ। এই কক্ষের প্রতিনিধিরা প্রত্যক্ষভাবে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সাল অবধি ভারতে মোট ষোলটি লোকসভা গঠিত হয়েছে। সংবিধান অনুসারে, এই কক্ষের প্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ সংখ্যা ৫৫২। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি সর্বোচ্চ ২০ জন প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে সভায় অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের যথেষ্ট প্রতিনিধি নেই, তবে তিনি সর্বোচ্চ দুইজনকে মনোনীত করতে পারেন। বর্তমানে অধ্যক্ষ এবং দুইজন মনোনীত প্রতিনিধি (যদি থাকেন) সহ লোকসভার মোট সদস্য সংখ্যা ৫৪৫।
প্রত্যেক লোকসভার মেয়াদ পাঁচ বছরের। পাঁচ বছর অন্তর এই সভা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিলুপ্ত হয়। তবে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে এই সভার মেয়াদ আরও একবছর বাড়ানো যায়। ভারতের ষোড়শ লোকসভা গঠিত হয়েছে ২০১৪ সালের মে মাসে।

রাজ্যসভা
রাজ্যসভা হল ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ। এই সভার সদস্যসংখ্যা ২৪৫। ভারতের রাষ্ট্রপতি শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সমাজসেবার ক্ষেত্র থেকে ১২ জন সদস্যকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত করেন; এঁরা মনোনীত সদস্য নামে পরিচিত। অন্যান্য সদস্যরা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির বিধানসভা কর্তৃক নির্বাচিত হন। রাজ্যসভার সাংসদদের কার্যকালের মেয়াদ ছয় বছর এবং প্রতি দুই বছর অন্তর সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ অবসর নেন। রাজ্যসভা স্থায়ী কক্ষ। নির্দিষ্ট সময় অন্তর লোকসভার অবলুপ্তি ও পুনর্নির্বাচন ঘটে। কিন্তু রাজ্যসভা ভেঙে দেওয়া যায় না। সরবরাহ-সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে রাজ্যসভা লোকসভার সমান মর্যাদা ভোগ করে। সরবরাহ-সংক্রান্ত বিষয়ে লোকসভার ক্ষমতা রাজ্যসভার চেয়ে বেশি। কোনো বিষয় নিয়ে দুই কক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে সংসদের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনের মাধ্যমে তা সমাধান করা হয়। তবে লোকসভার আকার রাজ্যসভার প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায়, যৌথ অধিবেশনে লোকসভারই শক্তি বেশি থাকে। আজ পর্যন্ত সংসদে মাত্র তিনটি যৌথ অধিবেশন বসেছে। শেষ যৌথ অধিবেশনটি বসেছিল ২০০২ সালে সন্ত্রাস-বিরোধী আইন পোটা পাস করানোর জন্য।

ভারতের আইনবিভাগ হল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ। এটি গঠিত হয়েছে রাজ্যসভা নামক একটি উচ্চকক্ষ ও লোকসভা নামক একটি নিম্নকক্ষ নিয়ে। রাজ্যসভার সদস্যসংখ্যা ২৪৫; এঁদের দপ্তরকাল ছয় বছর। এঁদের অধিকাংশই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির বিধানসভা থেকে রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে আসেন। অন্যদিকে লোকসভার ৫৪৫ জন সদস্যের মধ্যে ৫৪৩ জন পাঁচ বছরের মেয়াদে নিজ নিজ নির্বাচন কেন্দ্র থেকে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে সংসদে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি নেই, তবে তিনি দুই জন সদস্যকে উক্ত সম্প্রদায় থেকে সাংসদ মনোনীত করতে পারেন।

বৈদেশিক সম্পর্ক
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক। ১৯৫০-এর দশকে ভারত আফ্রিকা ও এশিয়ার ইউরোপীয় উপনিবেশগুলির স্বাধীনতার স্বপক্ষে সওয়াল করে। শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ ও মালদ্বীপে অপারেশন ক্যাকটাস—এই দুই ক্ষেত্রে ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সামরিক মধ্যস্থতায় অংশ নেয়। কমনওয়েলথের এক সদস্য ভারত, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ভারত-চীন যুদ্ধ ও ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক হয়ে ওঠে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়। ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তি পর্যন্ত সেই সম্পর্ক একই রকম থাকে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের তিনটি যুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় মিত্র বাহিনী বাংলাদেশকে সহায়তা করে। এছাড়াও ১৯৮৪ সালে সিয়াচেন হিমবাহ ও ১৯৯৯ সালে কার্গিলকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

সামরিক বাহিনী
স্থলসেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনা নিয়ে গঠিত ভারতের সামরিক বাহিনী বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী। রাশিয়া, ফ্রান্স ও ইসরায়েল ভারতের প্রধান অস্ত্রসরবরাহকারী রাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা সহকারী দেশ। ১৯৭৪ সালে স্মাইলিং বুদ্ধ ও ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ নামে মোট ছয়টি প্রাথমিক পরমাণু পরীক্ষণের মাধ্যমে ভারত পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। যদিও ভারতের ঘোষিত পরমাণু নীতি হল “প্রথম প্রয়োগ নয়”। ১০ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু চুক্তি সাক্ষরিত হয়। তার পূর্বেই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ও নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ারস গ্রুপ ভারতের উপর থেকে পরমাণু প্রযুক্তি ক্রয়বিক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ফলে ভারত কার্যত পরিণত হয় বিশ্বের ষষ্ঠ পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে

রাজনৈতিক বিভাগ
ভারত ২৯টি রাজ্য ও সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলবিশিষ্ট একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সাধারণতন্ত্র। ভারতে প্রত্যেক রাজ্যে নির্বাচিত রাজ্য সরকার অধিষ্ঠিত রয়েছে; নির্বাচিত সরকার রয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরি ও দিল্লিতেও। অপর পাঁচটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রাষ্ট্রপতির প্রত্যক্ষ শাসনাধীন; এই অঞ্চলগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রশাসক নিয়োগ করে থাকেন। ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠন আইন বলে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলি স্থাপিত হয়।

নদনদী
হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদনদীগুলির মধ্যে প্রধান গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র। উভয়েই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। গঙ্গার প্রধান উপনদীগুলি হল যমুনা ও কোশী নদী। কোশী নদীতে নাব্যতা অত্যন্ত কম থাকায় প্রতি বছর ভয়াল বন্যা দেখা দেয়। উপদ্বীপের প্রধান নদীগুলি হল গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা, ও কাবেরী। এই নদীগুলির খাত অত্যন্ত নাব্য হওয়ায় বন্যা কম হয়ে থাকে। এই নদীগুলিও বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। অন্যদিকে নর্মদা ও তাপ্তি পতিত হয়েছে আরব সাগরে। ভারতীয় উপকূলভূমির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল পশ্চিম ভারতে কচ্ছের রাণ ও পূর্বভারতে সুন্দরবনের পলিগঠিত বদ্বীপ অঞ্চল, যা ভারত ও বাংলাদেশে বিস্তৃত। ভারতে দুটি দ্বীপপুঞ্জ দেখা যায়: ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলভাগের নিকটে প্রবালদ্বীপ লাক্ষাদ্বীপ এবং আন্দামান সাগরের আগ্নেয় দ্বীপমালা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

Add a Comment