যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া সর্ম্পক

বিসিএস ও অন্যান্য চাকুরীর প্রস্তুতি: Atik sir, BCS Confidence

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় মস্কো মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ই-মেইল হ্যাক করেছে বলে অভিযোগ তুলে ওয়াশিংটন ৩৫ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। এ ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সম্পর্কের মধ্যে শুরু হয়েছে উত্তেজনা। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক এতটা তলানিতে কখনই নামেনি। পরিবর্তিত পরিস্থিতি আশঙ্কা জাগাচ্ছে আবার ‘স্নায়ুযুদ্ধে’ জড়াচ্ছে ওয়াশিংটন-মস্কো! কয়েক দশক ধরে এই দুই শক্তিধর দেশের সম্পর্কের কয়েকটি ঘটনা নিয়ে রইল আজকের বহুরৈখিক।

রুশবান্ধব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প!
ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও ওবামা প্রশাসন অভিযোগ করেছে নির্বাচনী প্রচারের সময় হিলারির ই-মেইলে যে হ্যাকিং হয়েছে তার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন স্বয়ং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এই ই-মেইল কেলেঙ্কারি হিলারির পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করে ডেমোক্র্যাট শিবির। নির্বাচন শেষ জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দহরম-মহরম বেড়েই চলেছে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম লেখালেখি করছে। তার সত্যতাও পাওয়া গেছে। ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর পুতিন তাকে ফোনে শুধু শুভেচ্ছাই জানাননি, এর মধ্যে পুতিন তাকে চিঠিও লিখেছেন। রিপাবলিকান সিনেটর ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জন ম্যাককেইন বলেছেন, এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার সাইবার কার্যক্রমে যে যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে, তা যুদ্ধের শামিল এবং এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উচিত রাশিয়াকে মূল্য দিতে বাধ্য করা। সম্প্রতি পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বহিষ্কার না করার ঘোষণায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক টুইট বার্তায় মিস্টার ট্রাম্প বলেন, তিনি সব সময়ই জানতেন রাশিয়ান নেতা খুবই স্মার্ট একজন মানুষ। তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তর দেশটির নীতিনির্ধারকদের মার্কিন কূটনীতিকদের বহিষ্কারের জন্য আনুষ্ঠানিক পরামর্শ দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘোষণা দেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশিয়ার কূটনীতিকদের বহিষ্কার করার জবাব হিসেবে রাশিয়া কোনো মার্কিন কূটনীতিককে এখনই বহিষ্কার করবে না। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্বভার গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।

সামরিক শক্তি
গত ফেব্রুয়ারিতে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার বিশ্বের সামরিক শক্তিধর ১১টি দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করে। যাতে দেখা যায়, বিশ্বের শীর্ষ সামরিক শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। আর তার পরই অবস্থান রাশিয়ার। প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাংক রয়েছে ৮ হাজার ৮০০টি, যুদ্ধবিমান রয়েছে ১৩ হাজার ৪০০টি, আর যুদ্ধজাহাজ ৪৩৭টি। রাশিয়ার ট্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি। দেশটির ট্যাংক সংখ্যা ১৫ হাজার ৪০০টি। এ ছাড়া যুদ্ধবিমান রয়েছে ৩ হাজার ৫০০টি, যুদ্ধজাহাজ ৩৫২টি। সামরিক শক্তি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, সরঞ্জাম ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের হিসাবে নিয়েছে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার। তবে পারমাণবিক অস্ত্রের হিসাব ধরা হয়নি। সামরিক শক্তির ভিত্তিতে প্রতিবছর র‍্যাংকিং করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বে ১৫ হাজারের বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে, যার ৯০ শতাংশই আমেরিকা ও রাশিয়ার হাতে। এদের মধ্যে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে পরমাণু বোমা আছে ৭ হাজার ১০০টি ও রাশিয়ার আছে ৭ হাজার ৩০০টি।

সিআইএ- সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (Central Intelligence Agency-CIA)
এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন একটি বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। এটি একটি স্বাধীন সংস্থা, যার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং উচ্চপদস্থ নীতিনির্ধারকদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অফিস অব স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেসের (ওএসএস) উত্তরসূরি হিসেবে সিআইএর জন্ম। প্রাথমিক কাজ হচ্ছে বিদেশি সরকার, সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা জাতীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে সরবরাহ ও পরামর্শ দেওয়া। সিআইএ যেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, তা বিশ্ব গুপ্তচর সংস্থার কৃতিত্বের ইতিহাসে একেবারে উপরের সারিতে। কোল্ড ওয়ারের সময় সিআইএ এজেন্টদের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে আজও অনেক গল্পগাথা শোনা যায়। এর কর্মীসংখ্যা অজ্ঞাত। তবে অনুমানিক এই সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি হতে পারে। এর জবাবদিহিতা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে। সদর দপ্তর দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ভার্জিনিয়া।

এফএসবি (সুলঝবা বেজপাসনোস্তি রাশিস্কয় ফেডেরাটসি)
রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস ১৯৯৫ সালের ৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করা হয়। দুনিয়া কাঁপানো গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির পূর্বসূরি। কেজিবির আগের নাম ছিল চেকা। এফএসবির সাহায্যকারী বা সহায়তাকারী সংস্থার নাম গ্রু। যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ এফএসবির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। সংস্থাটির রয়েছে মোট ১০টি বিভাগ। মূল দায়িত্ব হলো- বৈদেশিক গোয়েন্দা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বৈদেশিক কূটনীতিকদের ওপর নজরদারি, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা, গুপ্তহত্যা, বর্ডার সার্ভিল্যান্স, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, কাউন্টার টেররিজম, নিজস্ব লোক সংগ্রহ ও নেটওয়ার্ক তৈরি করা। এফএসবির সদর দপ্তর রাশিয়ার মস্কো শহরের ল্যুবিয়াঙ্কা স্কোয়ারে। এফএসবির কর্মীসংখ্যা আনুমানিক ৩ লাখ ৫০ হাজার। এর জবাবদিহিতা প্রেসিডেন্ট রাশিয়ান ফেডারেশন।

ন্যাটো
উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট বা ন্যাটো ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সামরিক সহযোগিতার জোট। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। এর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থিত। ন্যাটোর বর্তমান সদস্য দেশের সংখ্যা ২৮। ন্যাটোর সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর খরচ পৃথিবীর সব দেশের সামরিক খরচের প্রায় ৭০ শতাংশ। ন্যাটোর প্রথম মহাসচিব ছিলেন লর্ড ইসমে। তিনি ১৯৪৯ সালে বলেন যে, এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো ‘রাশিয়ানদের দূরে রাখা, আমেরিকানদের কাছে আনা এবং জার্মানদের দাবিয়ে রাখা।’

হটলাইন
সোভিয়েত রাশিয়া প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থার প্রস্তাব করে। ১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে প্রথম হটলাইন চালু হয়। সে সময় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলছিল। সারা পৃথিবীতে তাদের প্রভাব বিস্তারের লড়াই তখন তুঙ্গে। উভয়ের হাতেই পারমাণবিক অস্ত্রের বিশাল মজুদ। যে কোনো সময় পারমাণবিক যুদ্ধ বেধে যাওয়ার একটা বাতারণ ছিল। তাদের মধ্যে তখন দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। একবার সেভিয়েত রাশিয়া থেকে পাঠানো একটি সমঝোতা বার্তা যুক্তারাষ্ট্রে পৌঁছতে এবং পৌঁছবার পর ডিকোড (সাংকেতিক ভাষার অর্থ উদ্ধার) করতে প্রায় ১২ ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ এই সময়ে যুদ্ধ বেধে যাওয়টা মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। এই পটভূমিতে হটলাইন স্থাপনের উদ্যোগ গতি পায়।

হটলাইন লাল নয়, টেলিফোনও নয়। অনেকটা টেলিগ্রাফের মতো একটি যন্ত্রের মাধ্যমে সংকেত এনকোড করে পাঠানো হতো এবং অন্য প্রান্তে তা ডিকোড করা হতো। দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা নিজ নিজ ভাষায় বার্তা পাঠাতেন এবং সেটা অনুবাদ করে নেওয়া হতো। পরে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংকেত আদান-প্রদান ব্যবস্থা চালু হয়, তারপর আসে ফ্যাক্সিমিলি, যার সাহায্যে ছবিও পাঠানো যেত। আর ২০০৮ সাল থেকে নিরাপদ ই-মেইল ব্যবস্থার মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাতেই ব্যবহৃত হয়েছে এই হটলাইন। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ, ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ, তুরস্কের সাইপ্রাস দখল, আফগানিস্তানে রাশিয়ার সৈন্য প্রেরণ ইত্যাদি সময়ে পরস্পরকে সামরিক গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত করতে হটলাইন ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল তখনো ব্যবহৃত হয়েছিল এই হটলাইন।

স্নায়ুযুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রগুলো এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্রদের মধ্যকার টানাপড়েনের নাম ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ বা ‘শীতল যুদ্ধ’। চল্লিশের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিল। প্রায় পাঁচ দশকব্যাপী সময়কালে এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যকার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও রাজনৈতিক মতানৈক্য আন্তর্জাতিক রাজনীতির চেহারা নিয়ন্ত্রণ করত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো ছিল গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদের সপক্ষে আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র দেশগুলো ছিল সাম্যবাদী বা সমাজতন্ত্রপন্থি। স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান মিত্র ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, জাপান ও কানাডা। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে ছিল পূর্ব ইউরোপের অনেক রাষ্ট্র, যেমন- বুলগেরিয়া, চেকোস্লাভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি ও রোমানিয়া। স্নায়ুযুদ্ধের কিছুকাল ধরে কিউবা ও চিন সোভিয়েতদের সমর্থন দেয়। যেসব দেশ দুপক্ষের কাউকেই সরকারিভাবে সমর্থন করত না, তাদের নিরপেক্ষ দেশ বলা হতো। তৃতীয় বিশ্বের নিরপেক্ষ দেশগুলো জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অংশ ছিল। অবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের নাটকীয় পরিবর্তন ও পতনের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সমাপ্তি হয়। এই বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনাকে ইংরেজিতে ‘Stereotype’ কথাটি দিয়ে সর্বপ্রথম সূচিত করেন মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপমান, ১৯৪৭ সালে তার একই শিরোনামের বইতে।

ক্ষেপণাস্ত্র সংকট
১৯৬১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ফিদেল কাস্ত্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করার গোপন ও প্রকাশ্য তৎপরতা চালায় মার্কিন প্রশাসন। ১৯৬১ সালের মাঝামাঝি সময় ‘পিগস উপসাগর অভিযান’ নামে কথিত সিআইএ পরিচালিত তৎপরতা কিউবান সরকার ও জনগণকে আরও ক্ষিপ্ত করে তোলে। কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো নিজের মতা সুসংহত করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতা কামনা করে। ১৯৬২ সালের অক্টোবরে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবার ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র বা মিসাইল স্থাপন করে। মূল মার্কিন ভূখণ্ড থেকে মাত্র ১০০ মাইল দূরে স্থাপিত ওই ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিনিদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে। তারা অনতিবিলম্বে ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহারে আহ্বান জানায়। এতে সোভিয়েত কর্তৃপ অনমনীয় মনোভাব দেখায়। কিউবা যাতে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং মার্কিন দাবি মেনে নেয় সেই উদ্দেশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি মার্কিন নৌবাহিনীকে কিউবা ঘিরে ফেলার নির্দেশ দেন। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। দুই পরাশক্তির জেদাজেদির কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়। উত্তেজনার মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ অবশেষে নতি স্বীকার করেন। কিউবা থেকে সোভিয়েত রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবা আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারপ্রান্তে তুরস্কে অবস্থিত ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করে নেয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে এটিই ছিল সবচেয়ে উত্তেজনাকর ঘটনা। ইতিহাসে এটি ক্ষেপণাস্ত্র সংকট বা মিসাইল ক্রাইসিস নামে অভিহিত। বিস্তারিত দেখুন কিউবার মিসাইল সংকট।

ক্রিমিয়া সংকট
কৃষ্ণসাগরের উত্তর উপকূলে অবস্থিত উপদ্বীপ এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র ক্রিমিয়ার। যার আয়তন ২৬ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী শহর সিমফারোপোল। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের ২০ লাখ মানুষের অধিকাংশই রুশভাষী। ৬০ বছর আগে ক্রিমিয়া ছিল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত একটি অঞ্চল। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা খ্রুশ্চভ ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি উপহার হিসেবে লিখে দিয়েছিলেন ইউক্রেনকে। বলতে গেলে তখন থেকেই রুশদের মধ্যে অসন্তোষের শুরু। এরপর বিভিন্ন সময় রাশিয়া ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেও সফল হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ান বাহিনী ক্রিমিয়াকে দখলে নিতে গেলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিকে বিশ্বগণমাধ্যম ‘ক্রিমিয়া সংকট’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এক সময় ক্রিমিয়ার প্রধান জনগোষ্ঠী ছিল তুর্কি বংশোদ্ভূত তাতার। স্টালিনের আমলে তাদের উৎখাত করে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয় রুশদের। বর্তমানে উপদ্বীপটির মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ তাতার, ২৫ শতাংশ ইউক্রেনীয় ও ৬০ শতাংশ রুশ। দেশটি কী ইউক্রেনের সঙ্গে থাকবে না রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে- এই প্রশ্নে এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৬ মার্চ ২০১৪। ভোটে ক্রিমিয়ার ৯৭ শতাংশ জনগণ রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত হওয়ার পক্ষে রায় দেন। এ রায়কে পুঁজি করে ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট ১৭ মার্চ ২০১৪ নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে এবং রুশ ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে রুশ ফেডারেশনের সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত আইনে স্বাক্ষর করে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার একীভূত অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাশিয়ার আইনসভা ফেডারেল অ্যাসেম্বলির উচ্চকক্ষে ক্রিমিয়ার অন্তর্ভুক্তকরণ চুক্তিটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ফলে আইনসম্মত উপায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিমিয়া রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। ক্রিমিয়া বা ইউক্রেন সংকট প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার ওপর দুই দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরবর্তী সময়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও সুইজারল্যান্ড। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়াও তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলো থেকে খাদ্যসহ কৃষিপণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সিরিয়া মিশন
২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয় পশ্চিমা শক্তি এবং বেশ কিছু আবর রাষ্ট্র। এই অরাজকতার সুযোগে উত্থান হয় ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস)। সিরিয়ার সংকট মোড় নেয় ত্রিমুখী সংঘর্ষে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা আইএস দমনে এগিয়ে এলেও তেমন কোনো ফলাফল দেখাতে পারেনি। লম্বা হতে থাকে এ যুদ্ধ, বাড়তে থাকে মৃতদের তালিকা, ক্ষতির পরিমাণ। এ পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান থেকে বোমা হামলায় ধ্বংস হতে থাকে আইএসের ঘাঁটিগুলো। কোণঠাসা হতে থাকে জঙ্গি সংগঠনটি। সিরিয়ায় রাশিয়ার সাফল্য ফুটিয়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো পরাজয়ের চিত্র। গোটা সিরিয়ায় রাশিয়ার সেনা স্থাপনাগুলোয় শোভা পাচ্ছে পুতিনের ছবিসংবলিত পোস্টার। তাতে লেখা : ‘রুশ সশস্ত্র বাহিনী বিশ্ব নিরাপত্তার রক্ষক।’

Add a Comment