ফেব্রুয়ারি বিপ্লব

ফেব্রুয়ারি বিপ্লব (February Revolution): এই পোস্টটি পড়ার আগে অবশ্যই রুশ বিপ্লব পোস্টটি পড়বেন।

১৮৯৪ সালে নিকোলাস দ্বিতীয় রাশিয়ায় রোমানভ সাম্রাজের সম্রাট হিসাবে অধিষ্ঠিত হন। এ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল পশ্চিমে বাল্টিক সাগর থেকে পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত। এ বিশাল অঞ্চলে বাস করত ১৯৪ জাতের ১২৬মিলিয়ন মানুষ। এটি এমন একটি দেশ ছিল যেখানে কৃষক-শ্রমিকেরা কঠোর পরিশ্রম করেও দুঃখ কষ্টে জীবন যাপন করত। কিন্তু অন্যদিকে রাশিয়ার এলিট শ্রেণি, বুর্জোয়া শ্রেণি ও সম্রাট(শাসক) অত্যন্ত বিলাসিতাপূর্ণ জীবনযাপন করত।

ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পটভূমি

সমাজের এসকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রাশিয়ার মানুষের সংগ্রামের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস । ১৯০৫ সালের এক বিপ্লবের সৃষ্টি হলে জার সম্রাট নিকোলাস, দ্যুমা নামে একটি গণপরিষদ গঠনে বাধ্য হন। কিন্তু তিনি এ পরিষদের ক্ষমতা অনেক সীমিত রাখেন। দ্যুমা গণপরিষদের সদস্যদেরকে সবসময় জারের মন যুগিয়ে চলতে হত। ফলে তারা স্বাধীনভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না।

ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই অস্থিতিশীল সাম্রাজ্য নতুন এক সমস্যার সম্মুখীন হয়। জার সম্রাটের জন্য বিশ্ব যুদ্ধ ছিল এক বিভীষিকার নাম। কেননা সীমান্ত থেকে যেমন একের পর এক শোচনীয় পরাজয়ের খবর আসতেছিল, তেমনি দেশের অভ্যন্তরেও সামাজিক, অর্থনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি ছিল খাদ্য সংকট। আসলে কৃষকেরা তখন তেমন উৎপাদন করত না, কৃষকের নিজের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই উৎপাদন করতেন। কেননা তারা তারা উচ্চদামে বীজ-সার সংগ্রহ করে, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করলেও ন্যায্য মূল্য পেতেন না। যাহোক এসকল সমস্যার জন্য জার, দ্বিতীয় নিকোলাস কে দায়ী করা হয়। কেননা তিনিই ছিলেন তখনকার আর্মি প্রধান।

নিকোলাসের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী আলেকজান্ড্রা ছিলেন জার্মানি বংশোদ্ভূত। অনেকে মনে করতেন যে যুদ্ধে সম্রাজ্ঞী জার্মানিকে সমর্থন করতেন। উপরন্ত নিকোলাস সহ তার পরিবারের সকলে ছিলেন সাইবেরিয়ান এক আধ্যাত্মিক নেতা- গ্রিগরি রাসপুটিনের অন্ধ ভক্ত। নিকোলাস পরিবারের উপর রাসপুটিনের ছিল অনেক প্রভাব। ১৯১৬ সালে রাশিয়ার অভিজাত শ্রেণী তার প্রভাব থেকে নিকোলাস পরিবারকে মুক্ত করতে, রাসপুটিনকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে রাশিয়ার অভিজাত শ্রেণি (সম্ভবত) ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা পায়। এ হত্যাকাণ্ডের পর অভিজাত শ্রেণি মনেকরেছিল যে তারা জার পরিবারকে রাসপুটিনের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করতে পারলেন। কিন্তু না তাতেও অভিজাত শ্রেণি জারদেরকে রক্ষা করতে পারেনি। কেননা ইতমধ্যে বড় বড় ঘটনার মঞ্চ প্রায় প্রস্তুত হয়েগেছে।

ফেব্রুয়ারি বিপ্লব

১৯১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনে হাজার হাজার নারী রাজধানীর রাস্তায় নেমে আসে। তাদের দাবী ছিল খাদ্য সংকট দূর করা। পরেরদিন শ্রমিক ও ছাত্রছাত্রীরা তাদের সাথে যোগ দেয়। যাদের হাতে “জার শাসন নিপাত যাক” লেখা সম্বলিত প্লাকার্ড ছিল। সৈন্যদেরকে এ বিদ্রোহ দমন করার নির্দেশ দিলে তারা উল্টা বিদ্রোহ করে এবং বিক্ষোভে যোগ দেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ স্টেশনে ও কারাগারগুলোতে হামলা করে এবং জারদের নাম নিশানা সম্বলিত সকল কিছু পুড়িয়ে দেয়। ফলে অচিরেই সরকার রাজধানীর উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। এসময়ে সামরিক বাহিনীর উপদেষ্টাগণ দ্বিতীয় নিকোলাসকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে পরামর্শ দেন ও বলেন যে, সকল বিক্ষোভকারীকে নিয়ন্ত্রণ করার মত লোকবল পুলিশ বা সেনাবাহিনীর নেই। তাই আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিকোলাসের পদত্যাগ করা উচিৎ। দ্বিতীয় নিকোলাস এতে সাড়াদেন এবং ২মার্চ সিংহাসন ত্যাগ করেন। সেই সাথে অবসান ঘটে তিনশত বছরের রোমানভ সাম্রাজ্যের শাসন।

ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলাফল

  1. দ্বিতীয় নিকোলাসের সিংহাসন ত্যগ । নিকোলাসের পতনের পর তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা গ্রান্ড মাইকেল ডিউককে ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তাব করা হলে তিনি ক্ষমতা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন।
  2. রোমানভ সাম্রাজ্যের অবসান ।
  3. মোটামুটি ১৩০০ থেকে ১৪০০ মানুষের মৃত্যু।
  4. নিকোলাসের সিংহাসন ত্যাগের পর, গিওর্গি ভভের অধীনে একটি অন্তর্বর্তিকালীন সরকার(Provisional Government) গঠিত হয়।

Add a Comment