ট্রাম্প-কিম চুক্তি

১২ জুন ২০১৮ সিঙ্গাপুরে সেন্তোসা দ্বীপের ক্যাপেল্লা হোটেলে ট্রাম্প ও কিমের একান্ত বৈঠক ও পরে দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পরই উভয় দেশের নেতারা একটি যৌথ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

দুই নেতা চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার পর ট্রাম্প তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আজকে যা ঘটেছে তার জন্য আমরা খুবই গর্বিত। আমরা উভয়ই কিছু করতে চাই এবং করতে যাচ্ছি।’

ট্রাম্প-কিমের যৌথ ঘোষণার চারটি মূল পয়েন্ট চিহ্নিত করেছেন বিবিসি-
১. দুই দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়া নিজেদের মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়ার অঙ্গীকার করেছে।
২. কোরীয় উপদ্বীপে টেকসই এবং স্থিতিশীল শান্তি রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়া একসঙ্গে কাজ করবে।
৩. চলতি বছরের ২৭ এপ্রিলের পানমুনজোম ঘোষণা পুনর্নিশ্চিত করে কোরীয় উপদ্বীপকে পুরোপুরি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করতে উত্তর কোরিয়ার প্রতিশ্রুতি।
৪. যুদ্ধবন্দীদের উদ্ধারের অঙ্গীকার করেছে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যেই যা সনাক্ত করা হয়েছে তা অবিলম্বে পুনর্বাসনের অন্তর্ভুক্ত করাসহ উভয় দেশই পিওএম বা এমআইএ পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেছে।

সমঝোতায় বলা হচ্ছে, ‘কোরীয় উপদ্বীপকে পরিপূর্ণভাবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের কাজ এগিয়ে নিতে উত্তর কোরিয়া প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’ খেয়াল করুন, কিম ‘পরিপূর্ণ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের’ প্রতিশ্রুতি দেননি; তিনি কেবল ‘পরিপূর্ণভাবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের কাজ এগিয়ে নেওয়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সারা দুনিয়ার সমঝোতাকারী কূটনীতিকেরাই জানেন, প্রতিশ্রুতিতে ফাঁক থাকলে চুক্তির ভাষায়ও ফাঁক থেকে যায়। আসলে কিম শুধু আশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা শুনিয়েছেন। তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ কিংবা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও দেননি।

যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নিই, কিম পরিপূর্ণ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; তাহলেও দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া অনুযায়ী উত্তর কোরিয়া এই কার্যক্রম বন্ধ করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল, এই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ হবে ‘কমপ্লিট, ভেরিফাইয়্যাবল অ্যান্ড ইররিভারসিবল ডিসম্যান্টেলমেন্ট’ (সম্পূর্ণ, যাচাইযোগ্য এবং পুনর্নির্মাণ অযোগ্য বিলোপ সাধন), সংক্ষেপে ‘সিভিআইডি’। কিন্তু সমঝোতাপত্রে কৌশলে ‘ভেরিফাইয়্যাবল’ (যাচাইযোগ্য) এবং ‘ইররিভারসিবল’ (পুনর্নির্মাণ অযোগ্য) শব্দ দুটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। চিন্তা করুন, ১১০ পৃষ্ঠার ইরান চুক্তিতে পরমাণু অস্ত্র পরিদর্শক রাখা, নজরদারি ক্যামেরা বসানোসহ অজস্র শর্ত থাকার পরও এটিকে ট্রাম্প ‘ভয়ানক চুক্তি’ বলে সেটি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। অথচ সেই ট্রাম্পই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যে সমঝোতায় সই করলেন, সেটি মাত্র দেড় পৃষ্ঠার। সেখানে ‘যাচাইযোগ্য’ কথাটিও অন্তর্ভুক্ত নেই।

Add a Comment