কুর্দিদের সমস্যা

কুর্দি জাতি: মধ্য প্রাচ্যের একটি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। কুর্দিস্তান বলে পরিচিত অঞ্চলে এরা বসবাস করে। কুর্দিস্তান অঞ্চল ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও তুরস্কজুড়ে বিস্তৃত। কুর্দিরা ইরানি জাতির অংশ। তাদের ভাষা কুর্দি ভাষা।

Kurdish Inhabited Area
Kurdish Inhabited Area

কুর্দিদের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। অধিকাংশ কুর্দিদের আবাস পশ্চিম এশিয়ায়। কুর্দিস্তানের বাইরে পশ্চিম তুরস্কে কুর্দিদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপস্থিতি রয়েছে। ইরাকের স্বায়ত্ত্বশাসিত কুর্দিস্তানে কুর্দিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। প্রতিবেশী তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরানে কুর্দিরা সংখ্যালঘু। এসব অঞ্চলে কুর্দি জাতীয়তাবাদীরা স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্য আন্দোলন করছে।

ইরাকী কুর্দিস্তান ১৯৭০ সালে ইরাকি সরকারের সাথে এক চুক্তির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। ২০০৫ সালে ইরাকের নতুন সংবিধানেও ইরাকি কুর্দিস্তানের এই স্বায়ত্তশাসন পুনরায় স্বীকৃতি পায়। ইরাকের প্রতিবেশী ইরানের কুর্দি-অধ্যুষিত এলাকাটিকে কোর্দেস্তন নামের একটি প্রদেশের অন্তর্গত করা হয়েছে। কিন্তু ইরানের এই প্রদেশটি কোন স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ নয়।

তুর্কি কুর্দিস্তান ( তুর্কি কুর্দিদের দেশ), বলতে তুরস্কের দুটি প্রশাসনিক অঞ্চল পূর্ব আনাতোলিয়া ও পশ্চিম আনাতোলিয়া অঞ্চলদ্বয়কে বুঝায়।

আইএস দমন ও সিরিয়া সংকটে কুর্দি গোষ্ঠীগুলো নিজেদের রাজনৈতিকভাবে দায়িত্বশীল প্রমাণ করেছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তারা নিজেদের অধিকৃত অঞ্চল পরিচালনা করেছে। আর সামরিক দিক থেকে ওয়াইপিজি মধ্যপ্রাচ্যে স্পার্টানদের সমতুল্য। সীমিত অস্ত্রে দারুণ শৃঙ্খলা ও অমিত বিশ্বাস নিয়ে লড়াই করে তারা কোবান রক্ষা করেছে। ইতিহাস বলবে, তখন থেকেই হাওয়া আইএসের বিরুদ্ধে ঘুরে যেতে শুরু করে, যার আগ পর্যন্ত তাদের অদম্য মনে হচ্ছিল।

কুর্দিরা বরাবরের মতো সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ‘ফেডারেল’ মধ্যাঞ্চল গঠনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে জানায়, সিরিয়া সরকারের হাতে তারা যেভাবে নির্যাতিত হয়েছে, সেটা তারা কখনো ভুলবে না। সিরিয়ার সেনাবাহিনী জোর দিয়ে বলেছে, তারা কখনো কুর্দিদের জন্য ‘জায়গা ছেড়ে’ দেবে না।

যুক্তরাষ্ট্র আইএসকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইরাকের মসুলে ও সিরিয়ার রাকায় আইএসের ঘাঁটিতে হামলা চালায়। তারপর আসাদ ও আইএস বিরোধী “সিরিয়ান ডিফেন্স ফোর্স” গঠন করে। বলাই বাহুল্য যে এ ফোর্সে কুর্দিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এরপর সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের মূল সেনা হিসেবে তারা আইএসকে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে হটিয়ে দিয়েছে। সাহসের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধ চালিয়ে শেষমেশ ১৭ এর অক্টোবরে রাকা দখল করে। পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে কুর্দিরা অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছে। তারপর ও এ বাহিনী সম্পূর্ণরূপে মার্কিন সহায়তার উপর নিভর্শীল। এটা নিশ্চিত, কুর্দিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। নতুন ‘শক্তি’ তত দিনই টিকবে, যত দিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করবে, তাকে টিকিয়ে রাখার দরকার আছে। এরপর তাদের তুরস্ক ও সিরিয়ার দয়ার ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে, যারা আবার উভয়ে তাকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। এরদোয়ান ও আসাদ বহুদিন ধরে রাষ্ট্রের শত্রুকে ‘সন্ত্রাসী’ মনে করেন। ব্যাপারটা হলো, সিরিয়া তার ভূখণ্ডে ছোটখাটো কুর্দি রাষ্ট্র সহ্য করতে পারবে না। তুরস্ক দক্ষিণ সীমান্তে এরূপ রাষ্ট্র সহ্য করতে পারবে না, তা সে নিজেকে যত ধর্মনিরপেক্ষ, উদার ও সমাজতন্ত্রী দাবি করুক না কেন।

যে রাষ্ট্রেই থাকুক না কেন, কুর্দিদের ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপন করতে হয়। ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের কুর্দিরা ইসলামিক রিপাবলিকের সেনাদের হাতে ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে ইরাকের উত্তরাঞ্চলের কুর্দিরা সুপরিকল্পিত সামরিক অভিযানের মুখে পড়েছে। তারা আবার এক কূটনৈতিক উদ্যোগের সম্মুখীনও হয়েছে। এতে বোঝা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের দ্বন্দ্বমুখর রাজনীতিতে কুর্দিদের আকাঙ্ক্ষার কারণে ইরাক, ইরান ও তুরস্ক একজোট হতে পারে। স্বাধীনতার লক্ষ্যে তারা যে গণভোটের আয়োজন করে। আরও লক্ষণীয় ব্যাপার হলো পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের ইরাকি কুর্দি মিত্রদের বিরুদ্ধে গেছে। অথচ আইএসবিরোধী যুদ্ধে এরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পশ্চিমা সরকারের চিন্তায় যুক্তি ছিল, তাতে ছিল শীতল বস্তুনিষ্ঠা। কারণ, তারা ইরাকের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু কুর্দিদের পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখলে বলতে হয়, তাদের প্রয়োজন অনুসারে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।


👉 Read More...👇

Add a Comment