লীগ অফ নেশান্স ব্যার্থতার কারণ

শক্তি বা প্রভাবের সমতা বজায় রাখার ধারণাটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সমালোচিত ও পরে অনেকটা অবলুপ্ত হয়। যুদ্ধের অসামান্য রক্তক্ষয় ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনা করে নীতি নির্ধারকগণ সমতা বজায় রাখার পরিবর্তে একাধিক রাষ্ট্রের সমন্বয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান গঠনের ধারণাটিকে বিবেচনা করেন। এই ধারণা থেকেই লীগ অফ নেশান্সের উৎপত্তি হয়, যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলো এ ব্যাপারে ঐকমত্যে আসে যে একজনের উপর আক্রমণ এলে তাকে প্রত্যেকটি সদস্য রাষ্ট্র তার নিজের উপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করবে ও সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

প্রতিষ্ঠার দুই দশক পেরুবার আগেই লীগ অফ নেশান্স একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। একটি কারণ ছিল এই যে যুক্তরাষ্ট্রের মত একটি পরাশক্তি লীগ অফ নেশান্সের সদস্যপদ গ্রহণ করেনি, যার কারণে প্রতিষ্ঠানটির কর্মক্ষমতা অনেকাংশেই সীমিত ছিল। আর ব্যার্থতার দ্বিতীয় কারণটি জাতীয় স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত। অনেক ইউরোপীয় সদস্য রাষ্ট্রে এটি উপলব্ধি করে যে আগ্রাসন এড়াতে লীগ অফ নেশান্সের ধার্যকৃত নীতি অনেকাংশেই তাদের জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পর বস্তুতন্ত্রবাদী ও নব্য-বস্তুতন্ত্রবাদী ধারণার পুণর্জন্ম হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি কারণ ছিল লীগ অফ নেশান্সের ব্যার্থতা, এটি একটি সর্বগ্রাহ্য সত্য ছিল। এর পাশাপাশি বস্তুতন্ত্রবাদের প্রবক্তাগণ এটিও ব্যাখ্যা করেন যে, লীগ অফ নেশান্সের নীতিমালা অনেকটাই ছিল আদর্শবাদী, যা কোন কোন পরিস্থিতিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে যথার্থ দিকনির্দেশনা দিতে পারত না; সর্বোপরি তা যুদ্ধ থামাতেও কার্যকর ছিল না। বস্তুতন্ত্রবাদীদের মতে লীগ অফ নেশান্সের নির্দ্দিষ্ট এই দূর্বলতার কারণেই ইতালি ও জার্মানি দুটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়।

Add a Comment