নদী সম্পর্কিত সজ্ঞা

নদীর কাজ: যেসব প্রাকৃতিক শক্তি ভূপৃষ্ঠের নিয়ত ধীর পরিবর্তন করছে তাদের মধ্যে নদীর কাজ অন্যতম। নদী যখন পর্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন স্রোতের আঘাতে বাহিত নুড়ি, কর্দম প্রভৃতির ঘর্ষণে নদীগর্ভ ও পার্শ্বক্ষয় হয়। পার্বত্য অবস্থায় নদীর স্রোতের বেগ বেশি থাকে। এতে নদী নিচের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং কোনো সঞ্চয় হতে পারে না। যখন নদী সমভূমিতে আসে তখন নদী ক্ষয় এবং সঞ্চয় দুটোই করে। নদীর চলার পথে যেখানে নরম শিলা পাবে নদী ঠিক সেদিক দিয়ে ক্ষয় করে অগ্রসর হয়। ক্ষয়কৃত নরম শিলা অবক্ষেপণ করে বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠন করে।
এভাবে নদী ক্ষয় ও সঞ্চয় করতে করতে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। অনেকদিন ধরে এভাবে ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজ চলে বলে একে নদীর দ্বারা ধীর পরিবর্তন বলে।

নদীর গতিপথ: আমাদের জীবনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীন যতগুলো শহর দেখতে পাই তার সবগুলোই নদীর পাশে অবস্থিত। কেননা অতীতে মানুষ পানিপথেই চলাফেরা করত সবচেয়ে বেশি। নদীর গতিপথ সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে নদী কাকে বলে? উঁচু পর্বত, মালভূমি বা উঁচু কোনো স্থান থেকে বৃষ্টি, প্রস্রবণ, হিমবাহ বা বরফ গলা পানির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্রোতধারার মিলিত প্রবাহ যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির
প্রভাবে নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত হয়ে সমভূমি বা নিম্নভূমির উপর দিয়ে কোনো বিশাল জলাশয় বা হ্রদ অথবা সমুদ্রের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন তাকে নদী বলে। যেখান থেকে নদীর উৎপত্তি হয় তাকে নদীর উৎস বলে।

নদী যখন কোনো হ্রদ বা সাগরে এসে পতিত হয়, তখন সেই পতিত স্থানকে মোহনা বলে। নদীর অধিক বিস্তৃত মোহনাকে খাঁড়ি বলে। নদীর গতি ও কাজ সম্পর্কে জানতে হলে নদী বিষয়ে আরও কিছু মৌলিক ধারণা থাকা দরকার।
এগুলো হলো-
দোয়াব: প্রবহমান দুটি নদীর মধ্যবর্তী ভূমিকে দোয়াব বলে।

নদীসঙ্গম: দুই বা ততোধিক নদীর মিলনস্থলকে নদীসঙ্গম বলে।

উপনদী: পর্বত বা হ্রদ থেকে যেসব ছোট নদী উৎপন্ন হয়ে কোনো বড় নদীতে পতিত হয় তাকে সেই বড় নদীর উপনদী বলে। বাংলাদেশের তিস্তা ও করতোয়া হলো যমুনা নদীর উপনদী।

শাখানদী: মূল নদী থেকে যে সকল নদী বের হয় তাকে শাখানদী বলে। বাংলাদেশের আড়িয়াল খাঁ হলো পদ্মা নদীর শাখানদী।

নদী উপত্যকা: যে খাতের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হয় সে খাতকে উক্ত নদীর উপত্যকা বলে।

নদীগর্ভ: নদী উপত্যকার তলদেশকে নদীগর্ভ বলে।

নদীমাতৃক: নদীই যার মাতার মতো অর্থাৎ কেবলমাত্র নদীজলের সাহায্যে উৎপন্ন শস্যে পালিত।

Add a Comment