তিস্তা নদী

তিস্তা নদী, বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। তিস্তা সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি বিভাগের প্রধান নদী। একে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের জীবনরেখাও বলা হয়। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে গাইবান্ধার ফুলছড়িতে তিস্তা ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

ব্যুৎপত্তি
হিন্দু পুরাণ অনুসারে এটি দেবী পার্বতীর স্তন থেকে উৎপন্ন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নদীটির বাংলা নাম তিস্তা এসেছে ‘ত্রি-সে্রাতা’ বা ‘তিন প্রবাহ’ থেকে। সিকিম হিমালয়ের ৭,২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে এই নদীটি সৃষ্টি হয়েছে।

১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের অতিবৃষ্টি একটি ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করেছিল এবং সেই সময় নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়। তিস্তা নদীর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিমি, তার মধ্যে ১১৫ কিমি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থিত। তিস্তা একসময় করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এর অংশবিশেষ এখনও বুড়ি তিস্তা নদী নামে পরিচিত।

তিস্তার মাসিক গড় পানি অপসারণের পরিমাণ ২,৪৩০ কিউসেক। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে তিস্তার ভারতীয় অংশে গজলডোবায় স্থাপিত বাঁধের সবগুলি গেটবন্ধ বন্ধ করে দেয়া হলে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে পানিপ্রবাহ শূন্যে নেমে আসে। এর ফলে বাংলাদেশের ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা অববাহিকায় মানুষের জীবন যাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে এপ্রিল মাসে (২০১৪) বাংলাদেশে একটি প্রতিবাদী জনযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনযাত্রার মুখে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কিছু পানি ছাড়লে বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে পানি স্বল্প সময়ের জন্য উল্লেখযেোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

জলপ্রবাহ বণ্টন
১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বন্টনের ব্যাপারে স্থির হয় যে, তিস্তা নদীর পানির শতকরা ৩৬ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ এবং ৩৯ শতাংশ পাবে ভারত। বাকী ২৫ শতাংশ পানি নদীটির সংরক্ষিত রাখা হবে। কিন্তু কী ভাবে এই পানি ভাগাভাগি হবে সে বিষয়ে কোন দিকনির্দেশনা ছিল না। বহুকাল পরে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৫, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একটি যৌথবৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ শতাংশ দু’দেশের সমান অংশে ভাগ করে অবশিষ্ট ২০ শতাংশ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে প্রস্তাব দেয়। ভারত এই প্রস্তাবে অসম্মতি প্রকাশ করে জানায় যে, বাংলাদেশ বাংলাদেশের সমান পানি পেতে পারে না। নীলফামারীর তিস্তা নদীর উজানে ভারত জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার মহকুমায় গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশে স্বাভাবিক জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে । ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিস্তা নদীর মূল পানিপ্রবাহের উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশের তিস্তায় আসতে দেয়া হয়েছে। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের শুষ্ক মৌসুমে ভারত কর্তৃক তিস্তার পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পানি-ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন যে, ‘তিস্তার মূল প্রবাহ ভারত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তিস্তায় ডালিয়া ব্যারাজে উজান থেকে আসা পানিপ্রবাহ প্রায় শূন্য। এখন যে ৬০০-৭০০ কিউসেক পানি যা আসছে তা, ধারণা করি, ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের ভাটির উপনদী থেকে’। একটি সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তিস্তার পানির ব্যাপারে ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও মামলার উদাহরণ মানছে না। ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরে গেছে। পানি বন্টনের ব্যাপারে ভারতের একগুয়েমিতা, অনৈতিক ঢিলেমি ও হটকারীতায় তিস্তা তীরবর্তি ও আশেপাশের প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে উঠেছে। তলদেশে অজস্র পাথর, নুড়ি, বালি আর পলি পড়ে তিস্তার বুকে শুষ্ক মৌসুমে উত্তপ্ত বালুর স্তুপ। অন্যদিকে বর্ষাকালে মুল গতিপথ বদলিয়ে তিস্তা প্রচন্ডভাবে আছরে পড়ে দুই তীরে। ফলে নির্দয় ভাঙ্গনে ফি বছর ২০ হাজার মানুষ বাড়িঘর, গাছপালা, আবাদী জমি হারিয়ে পথের ভিখেরী হয়। নদীর প্রবাহ পথে বিশাল চর ও উভয় তীরে ভাঙ্গনের তাণ্ডবে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে এর প্রস্থ কোন কোন জায়গায় ৫ কিলোমিটারেরও বেশী। কোন জায়গায় ৫০০ মিটার।

তিস্তার জল দিয়ে ন’লক্ষ হেক্টর জমিকে সেচসেবিত করে তুলতে চায় পশ্চিমবঙ্গ। আর বাংলাদেশ চায় সাত লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচের জল দিক তিস্তা। নদী-বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ১৬ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচের জন্য নদীর জল দিতে গেলে শুখা মরসুমে তিস্তায় প্রতি সেকেন্ডে ১৬০০ ঘন মিটার জল থাকা দরকার। অথচ এখন থাকে প্রতি সেকেন্ডে ১৫০-২০০ ঘন মিটার জল। সিকিমে তিস্তার উপরে তৈরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ছাড়া জল পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা ব্যারাজ ধরে রাখতে পারে না। অর্থাৎ সেচের জন্য তিস্তার কাছে যতটা জল প্রত্যাশা করা হচ্ছে, বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সেই চাহিদা মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন নদী-বিশেষজ্ঞেরা।

দুঃখজনকভাবে আজ বিশ্বব্যাপী ছয় কোটি আট লাখের বেশি মানুষ নিজেদের বাসভূমি থেকে উচ্ছেদের শিকার। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারে চলা জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে প্রাণে বাঁচিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে।

২০০৬ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল গঠিত হয়। জেনেভাভিত্তিক এই কাউন্সিলের লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সমুন্নত ও সুরক্ষা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ‘চরম ইসরায়েলবিরোধী’ বলে গত বছরই সংস্থাটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছিলেন হ্যালি। একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, সংস্থাটির সদস্যপদের বিষয়টি মূল্যায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র। সংস্থাটির বিরুদ্ধে ‘নোংরা রাজনৈতিক পক্ষপাতের’ অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিল। আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল ত্যাগের কথা জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি।

বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। বৃহৎ জনসংখ্যার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ, এক বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১ হাজার ১২০ জন মানুষের বাস এ দেশে। ১৯৪৭ সালের পর ৭১ বছর ধরে এ দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর হার ২২ শতাংশ থেকে কমতে কমতে এখন জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশের কাছাকাছি এসে গেছে। বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ট্রানজিশন তত্ত্বের দ্বিতীয় পর্যায়ে (আর্লি এক্সপান্ডিং ফেজ) প্রবেশ করেছিল। ওই পর্যায়ে জনসংখ্যা প্রায় ২.৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। ফলে ১৯৪৭ সাল থেকে ২৫ বছরের কম সময়েই সত্তর দশকে এ দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

পেপার ক্লিপিং
তিস্তা নদীর পানি ব্যবহার চুক্তি হতে আর কত দূর
ইস্যু হিসেবেও তিস্তা কি শুকিয়ে গেল!

Add a Comment