কম্পিউটারের ইতিহাস

কম্পিউটারের ইতিহাস(History of Computer)

আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ বা প্রচলন শুরু হয় চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage) (১৭৯১-১৮৭১) নামে একজন ইংরেজ প্রকৌশলী ও গণিতবিদের হাতে। অনেকে তাকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলে থাকেন। তিনি তৈরি করেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন। ১৯৯১ সালে লন্ডনের বিজ্ঞান জাদুঘরে চার্লস ব্যাবেজের বর্ণনা অনুসারে একটি ইঞ্জিন তৈরি করা হয়। দেখা যায় যে, সেটি সঠিকভাবেই কাজ করছে এবং পরবর্তীতে তিনি এনালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে একটি গণনা যন্ত্রের পরিকল্পনা করেন।

তবে গণনার কাজটি কীভাবে আরো কার্যকর করা যায় সেটি নিয়ে ভেবেছিলেন কবি লর্ড বায়রনের কন্যা অ্যাডা লাভলেস (Ada Lovelace) (১৮১৫-১৮৫২)। মায়ের কারণে অ্যাডা ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞান ও গণিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৮৩৩ সালে চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে তার পরিচয় হলে তিনি ব্যবেজের এনালিটিক্যাল ইঞ্জিনকে কাজে লাগানোর জন্য ‘প্রোগ্রামিং’-এর ধারণা সামনে নিয়ে আসেন। এ কারণে অ্যাডা লাভলেসকে প্রোগ্রামিং ধারণার প্রবর্তক হিসেবে সম্মানিত করা হয়। ১৮৪২ সালে ব্যাবেজ তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ইঞ্জিন সম্পর্কে বক্তব্য দেন। সে সময় অ্যাডা ব্যাবেজের সহায়তা নিয়ে পুরো বক্তব্যের সঙ্গে ইঞ্জিনের কাজের ধারাটি বর্ণনা করেন। কাজের ধারা বর্ণনা করার সময় তিনি এটিকে ধাপ অনুসারে ক্ৰমাঙ্কিত করেন। অ্যাডার মৃত্যুর ১০০ বছর পর ১৯৫৩ সালে সেই নোট আবারো প্রকাশিত হলে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, অ্যাডা আসলেই অ্যালগরিদম প্রোগ্রামিংয়ের ধারণাটা প্ৰকাশ করেছিলেন।

ব্যাবেজ আর অ্যাডার এই কার্যক্রমের পাশাপাশি সে সময় পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়। বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যক্সওয়েল (James Clerk Maxwell) (১৮৩১-১৮৭৯) তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের ধারণা প্ৰকাশ করেন, যা বিনা তারে বার্তা প্রেরণের একটি সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।

1969 সালে আরপানেট (Arpanet) আবিস্কৃত হয়। বলা যায়, তখন থেকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কম্পিউটারসমূহের মধ্যে আন্তঃসংযোগ বিকশিত হতে শুরু করে। আর এ বিকাশের ফলে তৈরি হয় ইন্টারনেট। ১৯৭১ সালে আরপানেটে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যেম পত্রালাপের সূচনা করেন আমেরিকার প্রোগ্রামার রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিনসন (Ramond Samuel Tomlinson) | তিনিই প্রথম ই-মেইল সিস্টেম চালু করেন।

জগদীশচন্দ্র বসু
বিনা তারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বার্তা প্রেরণে প্ৰথম সফল হন বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু (Jagadish Chandra Bose) (১৮৫৮-১৯৩৭)। ১৮৯৫ সালে জগদীশচন্দ্র বসু অতিক্ষুদ্র তরজগ ব্যবহার করে এক সস্থান থেকে অন্য সস্থানে তথ্য প্রেরণে সক্ষম হন। কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কার প্রকাশিত না হওয়ায় সার্বজনীন স্বীকৃতি পাননি।

মার্কনি
একই কাজ প্রথম প্ৰকাশিত হওয়ায় সার্বজনীন স্বীকৃতি পান ইতালির বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো মার্কনি (Guglieno Marconi ১৮৭৪-১৯৩৭) | এ জন্য তাকে বেতার যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিশ শতকে ইলেকট্রনিক্সের বিকাশের পর প্রথমে আইবিএম কোম্পানি মেইনফ্রেম কম্পিউটার তৈরি করে। পর্যায়ক্ৰমে ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর আবিস্কৃত হলে সাশ্রয়ী কম্পিউটার তৈরির পথ সুগম হয়।

Apple Computer
মাইক্রোপ্রসেসরের আবির্ভাবের পর বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রে সেটি ব্যবহার করে পার্সোনাল কম্পিউটার তৈরির কাজ শুরু হয়। স্টিভ জবস (Steve Jobs) (১৯৫৫-২০১১) ও তার দুই বন্ধু স্টিভ ওজনিয়াক (Steve Wozaniak) ও রোনালন্ড ওয়েনে (Ronald Wayne) ১৯৭৬ সালের ১লা এপ্রিল অ্যাপল কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। অ্যাপলের হাতেই পার্সোনাল কম্পিউটারের নানান পর্যায় বিকশিত হয়েছে।

উইলিয়াম হেনরি বিল গেটস
অন্যদিকে ১৯৮১ সালে আইবিএম কোম্পানি তাদের বানানো পার্সোনাল কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার জন্য উইলিয়াম হেনরি বিল গেটস (William Henry Gates) (জন্ম অক্টোবর ২৮, ১৯৫৫) ও তার বন্ধুদের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটকে দায়িত্ব দেয়। বিকশিত হয় এমএস ডস এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ কোম্পানির অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার দিয়ে।

টিম বার্নাস লি
ইন্টারনেটের বিকাশকালে ১৯৮৯ সালে একজন ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রটােকল (http) ব্যবহার করে তথ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। সেই থেকে স্যার টিম বার্নাস লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (www) জনক হিসেবে পরিচিত। নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বিকাশের ফলে বিশ্বের নানান দেশের মধ্যে ইন্টারনেট বিস্তৃত হয়। ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং বিকশিত হয় বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার।

Add a Comment