বাংলাদেশ ব্যাংক

সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রকার ব্যাংকের আবির্ভাব হওয়ায় মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয়। এই উপলব্ধি থেকে অর্থব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জন্ম লাভ করে। মুদ্রাবাজারকে আপন ইচ্ছা ও গতিতে চলতে না দিয়ে একটি সুসংগঠিত এবং নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যাংকিং ব্যবস্থা সৃষ্টি এবং অর্থনীতির কল্যাণ সাধনই এই সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্যে ছিল। সৃষ্টির পর থেকেই মুদ্রা প্রচলন, অর্থ সরবরাহ এবং ঋণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক পালন করে আসছে। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদগণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। যেমন: অধ্যাপক সেয়ার্সের মতে,

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা সরকারের অধিকাংশ অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদন করে এবং যা উক্ত কার্যাবলি সম্পাদনকালে বিভিন্ন উপায়ে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলাের কার্যাবলির উপর প্রভাব বিস্তার করে সরকারের আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন করে থাকে।

দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া পৃথিবীর সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকই সাধারণত সরকারি মালিকানায় থাকে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা প্রধান হিসাবে গভর্নর দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান নির্বাহী হিসাবে গভর্নরকে সহকারী গভর্নরগণ সাহায্য ও সহযােগিতা করে থাকেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনায় একটি ব্যবস্থাপনা পর্ষদ কাজ করে। সরকার কর্তৃক মনােনীত ব্যক্তি, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের থেকে মনােনীত ব্যক্তি এবং অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ সাধারণত এই পর্ষদের সদস্য হয়ে থাকেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়। সার্বভৌমের প্রতীক হিসাবে এবং অর্থব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করা থেকে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আদেশ ১২৭ নামে অধ্যাদেশের মাধ্যমে তৎকালীন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের( State Bank of Pakistan) ঢাকাস্থ আঞ্চলিক ডেপুটি গভর্নরের কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে। যদিও এই অধ্যাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি স্থায়ী ও কার্যকর কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে ঘােষণা করা হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা কাল ধরা হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি মালিকানায় পরিচালিত এবং একটি পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যার নির্বাহী প্রধান গভর্নর। ৪ জন ডেপুটি গভর্নর, ১২জন নির্বাহী পরিচালক এবং ১ জন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ব্যবস্থাপনায় নির্বাহী প্রধানকে সহায়তা করে থাকেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক এর উদ্দেশ্য/কাজ

  1. বলিষ্ঠ মুদ্রা বাজার গঠন ও নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণ। সুসংগঠিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
  2. বৈদেশিক মুদ্রার আগমন ও নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা।
  3. ঋণ নিয়ন্ত্রণ, বাট্রার হার নির্ধারণ।
  4. ব্যাংক সমূহের ব্যাংক হিসাবে কাজ করা।
  5. নিকাশ ঘর হিসাবে কাজ করা- অর্থাৎ দুটি ব্যাংকের মধ্যে দেনা পাওনা থাকলে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যেমে পরিশোধ করা। যেহেতু সব ব্যাংকেরই কিছু পরিমাণ আমানত বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা থাকে।
  6. সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। মূল্যস্তর স্থিতিশীল রাখা।
  7. নোট ও মুদ্রার প্রচলন করা, মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ করা।
  8. মুদ্রা বিল, হুণ্ডি ইত্যাদির মাধ্যমে সহজ বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি করা।
  9. বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ করা।
  10. নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন, ও তালিকা ভুক্তি করন।
  11. কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের হিসাব পরীক্ষা করে।
  12. প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট আমানতের একটা নির্দিষ্ট পরিমান সংরক্ষণ করা।

তথ্য কণিকা
প্রথম গভর্ণর: এ এন এম হামিদুল্লাহ
বর্তমান গভর্ণর ড. ফজলে কবির। ১১তম
ডেপুটি গভর্ণর:
অর্থ সচিব:
শাখা ১০ টি। ৮ বিভাগের বিভাগীয় শহরে ৯টি। ঢাকাতে অতিরিক্ত ১টি। বিভাগীয় শহর ছাড়া বগুড়ায় ১টি।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ রাখে নোটের পরিবর্তে স্বর্ণ ৩০%
টাকা জাদুঘরঃ মিরপুর ,বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেনিং একাডেমির ২য় তলা। স্থাপিত:৫.১০.২০১৩
IMF office: বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন।

Add a Comment