শেয়ার বাজার

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার

যেকোনো দেশের অর্থনীতিতে শেয়ারবাজার মূলধন সংগ্রহের বাজার হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য সাধারণ জনগণ বা বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশা থাকে শেয়ারবাজার যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ক্রমশ উন্নতি সাধন করেছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। অতএব, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে বিনিয়োগ করা উচিত নয়।

এতে লাভের সাথে সাথে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পূর্বে কোম্পানিগুলোর বার্ষিক আর্থিক বিবরণী সংগ্রহ করে কোম্পানির বিভিন্ন তথ্য যেমন: শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), ব্যবসার ধরন, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা, নিট সম্পদমূল্যসহ (এনএভি) অন্যান্য আর্থিক তথ্যাদি বিশে−ষণ করা প্রয়োজন। কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি শিল্প খাত এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান সংগ্রহ করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রয়োজনে বাজার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া যায়। তবে কোনো অবস্থাতেই গুজবের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য থেকে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।

শেয়ার ইস্যুকারী কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয়। এরূপ প্রতিষ্ঠানকে স্টক এক্সচেঞ্জ বলা হয়। স্টক এক্সচেঞ্জ নামক প্রতিষ্ঠান সাধারণ জনগণ বা প্রতিষ্ঠান থেকে কোম্পানিকে তহবিল সংস্থানে সাহায্য করে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের একটি নির্দিষ্ট স্থানের ব্যবস্থা করে। বাংলাদেশে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে।

১) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড
২) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড

উল্লিখিত দুটি এক্সচেঞ্জে বিভিন্ন কোম্পানির সাধারণ শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবেঞ্চার এবং বন্ড ইত্যাদি ক্রয় বিক্রয় হয়। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়ার সুবিধার্থে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারগুলোকে এ,বি, জি, এন এবং জেড ইত্যাদি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। সাধারণত শেয়ারবাজারের গতি বা সার্বিক অবস্থা বুঝার জন্য সূচক ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ ঢাকা স্টক
এক্সচেঞ্জে :

ক) সকল শেয়ারমূল্য সূচক (All Shares Price Index),
খ) ডিএসই সাধারণ সূচক (DSE General Index) এবং
গ) ডিএসই ২০ সূচক (DSE20 Index) নামে তিনটি সূচক ব্যবহার করা হয়।

অনুরূপভাবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে :

ক) সিএসই সকল শেয়ারমূল্য সূচক (CSE All Shares Price Index)
খ) সিএসসিএক্স সূচক (CSE Selective Categories Index) এবং
গ) সিএসই ৩০ সূচক (CSE 30 Index) নামে তিনটি সূচক প্রচলিত আছে।

শেয়ারবাজারের সূচক প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। এসব ওঠানামা বাজারের গতি বা দিক সম্পর্কে তথ্য দেয়। এ সূচকের ওঠানামা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য ওঠানামার উপর নির্ভর করে। অধিকাংশ শেয়ারের দাম বাড়লে সূচক বাড়ে, আবার অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলে সূচক কমে।

শেয়ারে বিনিয়োগ পদ্ধতি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা দুটি উপায়ে বিনিয়োগ করতে পারে। যথা :

ক) প্রাথমিক বাজারের (Primary Market) মাধ্যমে
খ) সেকেন্ডারি বাজারের (Secondary Market) মাধ্যমে।

ক) প্রাথমিক বাজার: প্রাথমিক বাজার বলতে কোম্পানি যে বাজারে শেয়ার বিক্রির প্রথম প্রস্তাব (Initial public offering) করে, সে বাজারকে বুঝায়। কোনো কোম্পানি প্রথমবারের মতো বাজারে শেয়ার বিক্রি করলে সেটিকে শেয়ার বিক্রির প্রথম প্রস্তাব বলা হয়। একজন বিনিয়োগকারী কোনো কোম্পানির শেয়ার বিক্রির প্রথম প্রস্তাবে অংশগ্রহণ করে শেয়ার ক্রয় করলে, সে প্রাথমিক বাজারে শেয়ার ক্রয় করেছে বলে মনে করা হয়।

খ) সেকেন্ডারি বাজার: কোম্পানি কর্তৃক প্রথমবার বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির পর বিনিয়োগকারীরা নিজেদের মধ্যে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। যে বাজারে বিনিয়োগকারীরা নিজেদের মধ্যে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে, সে বাজারকে সেকেন্ডারি বাজার বলা হয়।

লভ্যাংশ ও লভ্যাংশ নীতি

একটি কোম্পানির অর্জিত লাভ বা মুনাফা শেয়ার মালিকদের প্রাপ্য আয়। ফলে অর্জিত লাভ বা মুনাফা শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। সাধারণত কোম্পানি অর্জিত লাভ বা মুনাফার পুরো অংশ শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করে না। লাভ ও মুনাফার একটি অংশ ভবিষ্যতে ব্যবসার কাজে অর্থায়নের জন্য সংরক্ষিত করে এবং বাকি অংশ শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করে। লাভ বা মুনাফার যে অংশ শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়, সে অংশকে লভ্যাংশ বলা হয়। কোম্পানি সাধারণত দুইভাবে লভ্যাংশ দিতে পারে।

ক) নগদ লভ্যাংশ
খ) স্টক লভ্যাংশ বা বোনাস শেয়ার

ক) নগদ লভ্যাংশ: যে লভ্যাংশ নগদ টাকায় পরিশোধ করা হয়, সে লভ্যাংশকে নগদ লভ্যাংশ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ: মনে কর, একটি কোম্পানি ১০% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। একজন শেয়ার মালিক ঐ কোম্পানির
১০ টাকা মুল্যের ৫০০ শেয়ার ধারণ করে। উক্ত ব্যক্তি নগদ লভ্যাংশ হিসেবে ১দ্ধ৫০০ টাকা বা ৫০০ টাকা পাবে।

খ) স্টক লভ্যাংশ: কোম্পানি অনেক সময় নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে স্টক লভ্যাংশ বা নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি স্টক লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। কোম্পানি সাধারণত বর্তমানে ইস্যুকৃত শেয়ারের উপর আনুপাতিক হারে স্টক লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। ফলে কোম্পানির শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মনে কর, একটি কোম্পানির বর্তমানে ১০ টাকা মূল্যের ১ কোটি শেয়ার আছে। কোম্পানি ৫০ শতাংশ বা ২:১ অনুপাতে স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ফলে কোন বিনিয়োগকারীর বর্তমানে ৫০০টি শেয়ার থাকলে স্টক লভ্যাংশ পাবার পর শেয়ার সংখ্যা ৭৫০টি হবে। অনুরূপভাবে কোম্পানির মোট ইস্যুকৃত শেয়ার ১.৫ কোটি হবে।

১৯৯৬ ও ২০১১ সালের শেয়ার বাজার কেলেংকারির কারণ অনুসন্ধান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এবং জবাবদিহিমূলক পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে।

Add a Comment