২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি

২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে গত বুধবার। সেখানে বেসরকারি খাতের জন্য ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানো হলেও বাড়ানো হয়েছে সরকারি খাতের জন্য। মুদ্রার সরবরাহ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে সহায়তার কথা বলা হয়েছে নতুন মুদ্রানীতিতে।
সরকারের ঘােষিত মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রীতি অনুযায়ী চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘােষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা যে ঋণ নিতে পারত তা নেয়নি, তাই নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানাে হয়েছে।

আর সরকারি ঋণে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানাে হয়েছে। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে ব্যাংক থেকে সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হবে, এ জন্য এ সুযােগ রাখা হয়েছে। তবে নতুন মুদ্রানীতিতে নীতিনির্ধারণী সুদহারে কোনাে পরিবর্তন আনা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে গতকাল বুধবার সকালে জানুয়ারি-জুন সময়ের মুদ্রানীতি ঘােষণা করেন গভর্নর ফজলে কবির।

নতুন মুদ্রানীতিতে, জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। গত জুলাই-ডিসেম্বরে যা ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, তবে এ সময়ে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

মুদ্রানীতি সংক্রান্ত প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ঘােষিত নীতির বাস্তবায়নে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলাে খেলাপি ঋণ কমানাে, যা ঋণের সুদহার কমাতে পারে। একটি গ্রুপের কাছে বেশি ঋণ কেন্দ্রীভূত হওয়া মুদ্রানীতির বাস্তবায়নে বাধা হতে পারে। এ জন্য নিয়মিত ভিত্তিতে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি বাড়াতে হবে।

মুদ্রানীতির ঘােষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, মুদ্রানীতির প্রথম উদ্দেশ্য ভােক্তা মূল্যস্ফীতি পরিমিত মাত্রায় রাখা। এতে প্রথমার্ধের সাফল্য বেশ সন্তোষজনক। গত অর্থবছরে বন্যাজনিত ফসলহানি অতিক্রম করে খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত উৎপাদন বৃদ্ধি এই সাফল্য অর্জনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ বহাল থাকার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এ জন্য মূল্যস্ফীতি পরিমিত রাখার ক্ষেত্রে সতর্কতা শিথিল করার সময় এখনাে আসেনি।

গভর্নর আরও বলেন, মুদ্রানীতির দ্বিতীয় উদ্দেশ্য জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সমর্থন জোগানাে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে তা অর্জিত হয়েছে। উৎপাদন কর্মকাণ্ডের জন্য
আমদানির ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানির ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি জিডিপি অর্জনে সহায়তা করবে। জাতীয় নির্বাচন শেষে এখন বিনিয়ােগ ও উৎপাদন কর্মকাণ্ডের ধারা আরও জোরালাে হবে বলে গভর্নর আশা করেন।

মুদ্রানীতি ঘােষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সফলতার কারণে নতুন মুদ্রানীতিতে বড় কোনাে পরিবর্তন আনার প্রয়ােজন হয়নি। বেসরকারি খাতে ঋণ কম যাওয়ার কারণ হতে পারে সংসদ নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য অনিশ্চয়তার উৎকণ্ঠা।

গভর্নর আরও বলেন, দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে প্রয়ােজনীয় বিনিয়ােগ বিদেশ থেকে আনতে হবে। এ জন্য আর্থিক খাতের সামর্থ্য বাড়াতে হবে। ব্যবস্থাপনার দক্ষতায় উৎকর্ষতা আনতে হবে। পাশাপাশি সুদ ও বিনিময় হারে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে পরিবর্তন আনাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিবর্তনের ব্যাঘাত হলে বাজারব্যবস্থার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে দেশের বিনিয়ােগ পরিবেশ সম্পর্কে বিনিয়ােগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত হবে।

এক অঙ্কের সুদহার প্রসঙ্গে ফজলে কবির বলেন, ‘অর্থনীতির সার্বিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিকে আরও কমিয়ে আনতে হবে। এটা কমিয়ে রাখলেই এক অঙ্কের সুদহার স্থায়ী হবে। আমাদের অর্থনীতি এখন ওই পথেই এগােচ্ছে।’

ব্যাংকের বাইরে বিকল্প অর্থায়ন প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বিকল্প অর্থায়নের বিধি প্রণয়ন ও প্রবর্তন করতে হবে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই তা আছে।

এ ছাড়া ব্যাংক ও করপােরেট প্রতিষ্ঠানগুলাের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ক্রেডিট রেটিংয়ে ভালাে মান বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারােপ করেন তিনি, যা বিদেশি ঋণ। ও বিনিয়ােগ আকর্ষণে সহায়তা করবে।

প্রথম আলো থেকে।

Add a Comment