স্থানীয় সরকার

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার গুরুত্ব কতটুকু? সংক্ষেপে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বর্ণনা দিন। (২৯তম বিসিএস লিখিত)

স্থানীয় সরকার হচ্ছে রাষ্ট্রের এলাকাকে বিভক্ত করে ক্ষুদ্রতর পরিসরে প্রতিষ্ঠিত সরকারব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে স্থানীয় সরকারের রূপ দুই ধরনের হয়।

প্রথমত, স্থানীয় প্রশাসন যেখানে প্রশাসক সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার নিয়োগ দেয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়নই এর প্রধান কাজ। সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সচিব সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হন।

দ্বিতীয়ত, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার বলতে বুঝি এমন ধরনের সরকারব্যবস্থা যা ছোট ছোট এলাকায় স্থানীয় প্রয়োজন মেটাবার জন্য জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত ও আইনের মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা।

আমাদের দেশে ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের উদাহরণ। স্থানীয় প্রশাসন আবার স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

স্থানীয় সরকারের গুরুত

ব্রিটিশ রাজনৈতিক দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিলের মতে, স্থানীয় সরকার সরকারি ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং এ বিষয়ে নাগরিকদেরকে সচেতন করে। স্থানীয় সরকার স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিকদেরকে যথাযথভাবে বিভিন্ন সেবা প্রদান করতে পারে। স্থানীয় প্রশাসকদের পক্ষে সঠিকভাবে স্থানীয় জনগণের স্বার্থ চিহ্নিত করা, তাদের বিভিন্ন বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান লাভ এবং স্থানীয় উন্নয়নসংক্রান্ত বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা লাভ সম্ভব হয়।

নাগরিকতা বিকাশে স্থানীয় সরকার

বাংলাদেশে শহর ও গ্রামীণ নাগরিকদের সাথে স্থানীয় সরকারের যোগাযোগ ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নাগরিকতার বিকাশে স্থানীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নিচে তা আলোচনা করা হলো।

১) নাগরিক সেবা প্রদানে স্থানীয় সরকার: সকল শ্রেণির মানুষ তাদের নানা প্রয়োজনে স্থানীয় সরকার দপ্তরে যোগাযোগ করে। যেমন- শিক্ষার্থীদের পিতার আয়ের সনদপত্র সত্যায়িতকরণে এবং জন্মনিবন্ধনের সার্টিফিকেট তোলার প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে যেতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা নাগরিকদেরকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সেবা প্রদান নিশ্চিত করার বিবরণ প্রকাশ করে, যা ‘নাগরিক সনদ’ নামে পরিচিত। নাগরিক সেবা সহজলভ্য করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সরকারে বর্তমান ই-গভার্নেন্স চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে বলা যায়, ঘরে বসে মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুত গতিতে লাভ করতে পারবে। স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রে নতুন এই সংযোজন এক যুগান্তকারী ঘটনা। এ ব্যবস্থা নাগরিক অধিকার অর্জনে পূর্বের চেয়ে বেশি সহায়ক হবে।

২. স্থানীয় শাসনে জনগণের অংশগ্রহণ: গ্রামে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা গ্রামের মানুষদেরকে সরকারের সাথে সংযুক্ত করে। ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ বিবাদ সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

৩. নেতৃত্বের বিকাশঃ স্থানীয় নেতারা স্থানীয় পর্যায়ে সফল নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখে।

৪. দুর্নীতি রোধ ও প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নঃ কেন্দ্র থেকে সকল বরাদ্দ স্থানীয় পর্যায়ে সরাসরি আসে, ফলে তার সুষম বণ্টন সম্ভব হয়। এতে দুর্নীতির সুযোগ কম। তাছাড়া স্থানীয় প্রকল্পে জনগন সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় তার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।

৫. বিবাদ নিষ্পত্তি: যেকোনো বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য ইউনিয়ন পরিষদ আয়োজিত সালিশ বা অনানুষ্ঠানিক নিষ্পত্তির ব্যবস্থা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সরকার প্রতিষ্ঠিত গ্রাম আদালত গ্রামীণ জনগণের বিবাদ নিষ্পত্তিতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। এর ফলে গ্রামের গরিব মানুষ শহরে এসে বিচারের জন্য হয়রানির স্বীকার হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

৬. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনঃ যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে স্থানীয় সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে, তাই বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক জটিলতা এড়িয়ে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানো সম্ভব।

৭. কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের চাপে হ্রাসঃ স্থানীয় সরকারের মাধ্যেমে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের চাপ কমে যায়। কেননা অনেক সময় রাজধানীর বিপুল সংখ্যক জনগণকে নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার কে ব্যস্ত থাকতে হয়।


👉 Read More...👇

Add a Comment