সিটি কর্পোরেশন

বাংলাদেশের প্রধান শহরকে কেন্দ্র করে সিটি কর্পোরেশনগুলো গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মোট ১১টি সিটি কর্পোরেশন রয়েছে। এগুলো হলো ঢাকায় দুইটি (ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ), চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা,
বরিশাল, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও রংপুর।

গঠন
প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশন সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত সংখ্যক ওয়ার্ডে বিভক্ত থাকে। একজন মেয়র, নির্ধারিত ওয়ার্ডের সমান সংখ্যক কাউন্সিলর এবং নির্ধারিত ওয়ার্ডের এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যক সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর নিয়ে সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। মেয়র ও কাউন্সিলরগণ জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলরগণ নির্বাচিত হন কাউন্সিলরদের ভোটে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করেন। সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বছর।

কার্যাবলি
মহানগর এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং উন্নয়নের জন্য সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে থাকে। নিচে তা আলোচনা করা হলো।

১. সিটি কর্পোরেশন মহানগরীর রাস্তাঘাট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে। মোটরগাড়ি, বাস, ট্রাক ছাড়া অন্যান্য যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান করে এবং রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।

২. জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য সিটি কর্পোরেশন নালা-নর্দমা, রাস্তাঘাট আবাসিক এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে। ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন নির্মাণ, বিভিন্ন স্থানে শৌচাগার, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ইত্যাদি নির্মাণ করে। এছাড়া হাসপাতাল, মাতৃসদন, শিশুসদন, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনা করে।

৩. জনসাধারণের জন্য নিরাপদ খাওয়ার পানি সরবরাহ, কূপ ও নলকূপ খনন এবং আবদ্ধ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে।

৪. সিটি কর্পোরেশন মহানগর এলাকায় পচা-বাসি ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় ও সরবরাহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুত, আমদানি ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রদান করে।

৫. মহানগর এলাকায় গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন, গবাদি পশু রেজিষ্ট্রিকরণ, বিপজ্জনক পশু আটক ও হত্যা, পশুর মৃতদেহ অপসারণ, হাঁস-মুরগির খামার স্থাপন ইত্যাদি কাজ করে।

৬. মহানগরীর গরিব-দুঃখী মানুষকে সাহায্য করা, অনাথ আশ্রম ও জনকল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন, ভিক্ষাবৃত্তি ও পতিতাবৃত্তি রোধ ও পুনর্বাসন, জুয়াখেলা, মাদকাসক্তি ও অসামাজিক কাজ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে।

৭. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সিটি কর্পোরেশন ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।

৮. মহানগরীর নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র, নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে। শিক্ষা বিস্তারের জন্য নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন স্থাপন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান, হোস্টেল নির্মাণ, বৃত্তি প্রদান, পাঠাগার নির্মাণ ও পরিচালনা ইত্যাদি কাজ করে।

৯. সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য সিটি কর্পোরেশন মিলনায়তন, আর্ট-গ্যালারি, তথ্যকেন্দ্র, জাদুঘর, মুক্তমঞ্চ ইত্যাদি নির্মাণ করে।

১০. মহানগরের পরিবেশের উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সিটি কর্পোরেশন রাস্তার পাশে ও উন্মুক্ত স্থানে বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণ করে। জনসাধারণের অবকাশ যাপনের জন্য উদ্যান নির্মাণ করে।

১১. সিটি কর্পোরেশন মহানগর এলাকায় ঘরবাড়ি নির্মাণের অনুমতি প্রদান করে। অননুমোদিত ঘরবাড়িসহ সকল স্থাপনা ভেঙে দেয় এবং অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের ব্যবস্থা করে।

১২. সিটি কর্পোরেশন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করে।

১৩. মহানগরীর শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সিটি কর্পোরেশন ছোটখাটো বিচারকাজ সম্পাদন করে। বিবাদ মীমাংসা ও মহল্লায় শান্তি রক্ষার জন্য শান্তিরক্ষী নিয়োগ করে। মহানগরীতে চুরি-ডাকাতি, হাইজ্যাকরোধ ও সন্ত্রাস দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

১৪. সর্বোপরি মহানগরীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য সিটি কর্পোরেশন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে।

আয়ের উৎস
ক. সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আরোপিত যেকোনো কর, উপকর, টোল ও ফিস ইত্যাদি;
খ. কর্পোরেশনের উপর ন্যস্ত এবং তৎকর্তৃক পরিচালিত সকল সম্পত্তি হতে প্রাপ্ত আয় বা মুনাফা;
গ. সরকার বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের নিকট হতে প্রাপ্ত অনুদান;
ঘ. স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবিশেষ কর্তৃক প্রদত্ত দান;
ঙ. কর্পোরেশনের উপর ন্যস্ত সব ট্রাস্ট হতে প্রাপ্ত আয়;চ. কর্পোরেশনের অর্থ বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত মুনাফা;
ছ. অন্যান্য উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থ;
জ. আইনের অধীন অর্থদণ্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ ইত্যাদি।


👉 Read More...👇