যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার

যে শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান কর্তৃক কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয়, তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। যেমন- ভারত ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় দুই প্রকারের সরকার থাকে একটি কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্যটি অঙ্গরাজ্যের সরকার বা প্রাদেশিক সরকার। রাষ্ট্রের সংবিধান কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্যের সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেয়। রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বার্থের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের এবং স্থানীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলো অঙ্গরাজ্য বা প্রাদেশিক সরকারের নিকট অর্পণ করা হয়। আঞ্চলিক শাসন ব্যাপারে অঙ্গরাজ্যগুলো স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। এই শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত ও দুম্পরিবর্তনীয় হয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুণ

অঙ্গরাজ্যগুলোর স্বতন্ত্র সত্তা অক্ষুন্ন রেখে জাতীয় ঐক্যের সমন্বয় সাধনের এক রাজনৈতিক কৌশল হল যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্য সরকারের মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতা বণ্টন করা হয় বলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের ভার অনেক লাঘব হয়ে যায়। এতে উভয় সরকারের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া, সুনির্দিষ্ট করে ক্ষমতার বণ্টন থাকায় কেন্দ্রীয় সরকার অঙ্গরাজ্যের কাজে হস্তক্ষেপ করে স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ত্রুটি

এ ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেদের প্রয়োজন ও সুবিধামত আইন প্রণয়ন করে বলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে আইন ও শাসন বিষয়ে সামঞ্জস্য থাকে না। একই রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণীত হয়। উভয় প্রকার সরকারের মধ্যে অধিকার সম্পর্কিত বিরোধও প্রায়ই দেখা যায়। ক্ষমতা উভয় সরকারের মধ্যে বিভাজিত হওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় সরকার অনেকখানি দুর্বল হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যয়বহুল। জাতীয় ও আঞ্চলিক সরকারের দুটি পৃথক শাসন কাঠামোতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংখ্যা সরকারের প্রশাসনিক ব্যয় বৃদ্ধি করে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুণ ও দোষ যাই থাকুক না কেন বর্তমান বিশ্বে আঞ্চলিক বিভেদ দূর করতে হলে যুক্তরাষ্ট্র গড়ে তোলা আবশ্যক।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার সফল করার উপায়

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কিছুটা জটিল প্রকৃতির শাসন ব্যবস্থা। এর সফলতা অর্জন করতে হলে কতগুলো শর্ত পালন করা আবশ্যক। শর্তগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল।
(ক) যুক্তরাষ্ট্রীয় মনোভাব: জনসাধারণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র গঠন ও সংরক্ষণ করার ইচ্ছা থাকতে হবে। ডাইসি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গঠনের জন্য জনসাধারণের মধ্যে প্রবল ইচ্ছা বা বাসনা থাকবে, তবে তারা এক হয়ে যাবে না।” এরূপ মনোভাব না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা যায় না।
(খ) যুক্তরাষ্ট্রকে কার্যকর করার যোগ্যতা: যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পরিচালনার জন্য নেতৃত্ব ও দক্ষতার প্রয়োজন। কে.সি. হুয়্যার (K.C. Wheare) বলেন, “যেসব রাজ্য ও জনসাধারণ যুক্তরাষ্ট্র গঠন করতে চায়, তাদেরকে অবশ্যই উক্ত ব্যবস্থা কার্যকর করার যোগ্য হতে হবে।”

(গ) ভৌগোলিক নৈকট্য: যুক্তরাষ্ট্র গঠনে ইচ্ছুক অঞ্চলগুলো নিকটবর্তী হওয়া প্রয়োজন। তাহলে তাদের মধ্যে । কম-বেশি স্বার্থের অভিন্নতা থাকবে।
(ঘ) উপাদানগত ঐক্য: যুক্তরাষ্ট্র গঠনে ইচ্ছুক অঞ্চলগুলোর জনসাধারণের মধ্যে ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, বংশ ও সংস্কৃতির ঐক্য থাকা প্রয়োজন। এতে পরস্পরের মধ্যে একাত্মবোধ গড়ে ওঠে এবং রাষ্ট্রীয় সংহতি দৃঢ় হয়।
(ঙ) নেতৃত্ব: যুক্তরাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। জর্জ ওয়াশিংটন (George Washington), হ্যামিলটন (Hamilton), ম্যাডিসন (Madison) ও বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিনের (Benjamin Franklin) মতো নেতৃবৃন্দের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গড়ে উঠেছে এবং দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে।
(চ) অঙ্গরাজ্যগুলোর সমতা: যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো সম্পদ, আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে কমবেশি সমান হলে ভালো হয়। পার্থক্য ব্যাপক হলে মতভেদ দেখা দিতে পারে।
(ছ) উত্তম সংবিধানঃ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান হবে লিখিত ও দুম্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির। যাতে ক্ষমতা বণ্টন, জাতীয় ঐক্য, অঙ্গরাজ্যের স্বাধিকার এবং নাগরিক অধিকার সুষমভাবে বজায় থাকে।
(জ) আইনানুগত্য: যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিককে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন মেনে চলতে হয়। দু ধরনের আইন মেনে চলার জন্য তাদেরকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

আলোচিত শর্তগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকারিতার জন্য অত্যাবশ্যক। এসব শর্ত যে যুক্তরাষ্ট্রে বেশি পালিত হবে সে সরকার তত বেশি সফলতা অর্জন করবে।


👉 Read More...👇

Add a Comment