বিভিন্ন ধারার সঙ্গীত

জারিঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে অধিক গাওয়া হয়। জারি শব্দটির অর্থ বিলাপ বা ক্রন্দন। বাংলাদেশে মহররমের বিশেষ দিনে কারবালার শোকাবহ ঘটনা অবলম্বনে নৃত্যগীত সহকারে যে কাহিনী পরিবেশিত হয় তা সাধারণভাবে জারিগান বলে পরিচিত। এছাড়া, যে কোনো ধর্মীয়, রূপকথার গল্প, অতিলৌকিক বা সামাজিক বিষয় নিয়ে রচিত গানকেও কখনো কখনো জারিগান নামে ডাকা হয়।

সারি– নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতায় এ গান গাওয়া হয়।

ভাটিয়ালী – বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের জনপ্রিয় গান। বিশেষ করে নদ-নদী পূর্ণ ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর-পূর্ব দিকের অঞ্চলগুলোতেই ভাটিয়ালী গানের মূল সৃষ্টি,। এ গানগুলো রচিত হয় মূলত মাঝি, নৌকা, দাড়, গুন ইত্যাদি বিষয়ে। সাথে থাকে গ্রামীণ জীবন, গ্রামীণ নারীর প্রেমপ্রীতি, ভালবাসা, বিরহ, আকুলতা ইত্যাদির সম্মিলন।

ভাওয়াইয়া – ভাওয়াইয়া মূলত বাংলাদেশের রংপুর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে ও আসামের গোয়ালপাড়ায় প্রচলিত এক প্রকার পল্লীগীতি। এসকল গানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ গানগুলোতে স্থানীয় সংস্কৃতি, জনপদের জীবনযাত্রা, তাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক ঘটনাবলী ইত্যাদির সার্থক প্রয়োগ ঘটেছে।

ভাণ্ডারী – মাইজভান্ডারী ধারার অনুসারীদের গাওয়া মরমী গান। এ ধারার প্রবর্তক গাউছুল আযম হযরত মাওলানা সৈয়দ আহমদুল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) এবং গাউছুল আযম হযরত মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারি । একশ বছরের ও আগে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় এ ধারার উদ্ভব হয়।

পালাসিলেট, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলের গান। দুই পক্ষের প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমের গাওয়া হয়।

গম্ভীরা – বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের অন্যতম একটি ধারা। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও পশ্চিমবঙ্গের মালদহ অঞ্চলে গম্ভীরার প্রচলন রয়েছে। গম্ভীরা দলবদ্ধভাবে গাওয়া হয়। এটি বর্ণনামূলক গান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা অঞ্চলের গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে নানা-নাতি খুব জনপ্রিয়। ধারণা করা হয় যে, গম্ভীরা উৎসবের প্রচলন হয়েছে শিবপূজাকে কেন্দ্র করে। শিবের এক নাম ‘গম্ভীর’, তাই শিবের উৎসব গম্ভীরা উৎসব এবং শিবের বন্দনাগীতিই হলো গম্ভীরা গান।

চটকা – ভাওয়াইয়া গানের একটি ধারা হলো চটকা গান। এ গান নাচুনে গান বলেও পরিচিত। যেখানে রাজবংশী সম্প্রদায় আছে সেখানেই এ গানের প্রচলন বেশি।। চটকা রাজবংশী সম্প্রদায়ের নিজস্ব লোকসংগীত। তাই বলা যায় যে এটি রংপুর অঞ্চলের গান। । সুর ও ছন্দের দিক থেকে চটকা গানের সুর চটুল ও নাচুনে এবং তার গতিও দ্রুত।

গাজীর গীত – রংপুর অঞ্চলের গান।

কীর্তন – রাধাকৃষ্ণের প্রেম-বিরহ নিয়ে হিন্দু সমাজের গান।

মুর্শিয়া– শিয়া মতালম্বীদের গান।

লেটোস– ময়মনসিংহের গান।

বাউল – লালন ফকির, শাহ আব্দুল করিম বাউলে গানে অগ্রগণ্য

মারফতি– ধর্ম বিষয়ে নিগুঢ় তত্ত্বের গান।

দেহতত্ত্ব – মানব দেহ সম্পর্কিত গান।

বিচ্ছেদী – প্রেমিক প্রেমিকের বিচ্ছেদ নিয়ে রচিত গান।
গাইনের গীত- নেত্রকোনার পাশ্ববর্তী জেলা ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জেও একসময় এর প্রচলন ছিল।

গজল– বাদ্যযন্ত্র ছাড়া আল্লাহর স্তুতিমূলক গান।

Add a Comment