বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

স্বাধীন বিচার বিভাগ নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা রক্ষার অন্যতম রক্ষাকবচ। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে স্বাধীন, নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকাজ করার ক্ষমতাকে বোঝায়। বিচার বিভাগ যদি আইন ও শাসন বিভাগের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বিচারকাজ করতে পারে তবে সেই বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য বিচারকদের দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা, বুদ্ধি ও আইন সংক্রান্ত গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন। বেকন beccon) বলেছেন, “বিচারকদের সিংহের মতো হতে হবে, তবে সিংহাসনের ছত্রছায়া তাদের ওপরে থাকবে না।” বিচার বিভাগের স্বাধীনতার গুরুত্ব রাষ্ট্রের শাসনকাজের উৎকর্ষতার জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রয়োজন। আইন ও শাসন বিভাগের বিপূল ক্ষমতায় মুখে বিচার বিভাগ যদি দুর্বল ও মুখাপেক্ষী হয় তবে সেখানে জনগণের অধিকার নিশ্চিত হতে পারে না। লাকি বলেন,“ব্যক্তি-স্বধীনতার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।” সমাজের দুর্বল মানুষকে সবলের স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বাঁচাতে স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

একটি রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার মান এবং জনগণের অধিকারের অবস্থা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর নির্ভরশীল। ব্রাইস বলেন, “কোনো শাসন ব্যবস্থার উৎকর্ষতা নির্ধারণের মানদণ্ড হল স্বাধীন বিচার বিভাগ।”

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার উপায়

নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্ব। স্বাধীন বিচার বিভাগ গণতন্ত্রের শক্তিশালী রক্ষাকবচ। স্বাধীন বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে হলে কতগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। যেমন-

(ক) নিয়োগ পদ্ধতি: বিচারকদের নিয়োগপদ্ধতি এমন হতে হবে যেন কোনো বিচারককে আইন ও শাসন বিভাগের অনুকম্পা পাওয়ার জন্য মুখাপেক্ষী হতে না হয়। স্থায়ী বিচারকমণ্ডলীর কমিটির দ্বারা সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা বিচারকদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা হবে।

(খ) যোগ্য ও দক্ষ বিচারক নিয়োগ: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিচারকদের যোগ্যতার ও দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান আইনজ্ঞকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। তাহলে তিনি একজন দৃঢ়চেতা ও নির্ভীক বিচারক হবেন। বিচারক কোনো পক্ষ এবং লোভ লালসার কাছে নতি স্বীকার করবেন না। তাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বজায় থাকবে।


(গ) উপযুক্ত বেতন ও মর্যাদা: বিচারককে উপযুক্ত বেতন ও সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে যাতে সমাজের সকলেই শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। কার্যকালে তাদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির স্বাভাবিক ব্যবস্থা রাখতে হবে। চাকরি পেয়ে কোনো বিচারককে অন্য কোনো সরকারি কাজে নিয়োগ করার ব্যবস্থা রাখা চলবে না।

(ঘ) কার্যকাল ও অপসারণ পদ্ধতি: বিচারকদের কার্যকাল স্থায়ী হতে হবে। একবার নিয়োগ করলে তাঁর কার্যকালের মধ্যে জুডিসিয়াল কমিটির সুপারিশ ছাড়া তাকে অপসারণ করা চলবে না।

(ঙ) বিচার বিভাগের প্রাধান্য: বিচার বিভাগকে শাসন ও আইন বিভাগের হস্তক্ষেপ মুক্ত স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং বিচার বিভাগের মতামতকে সকলের উপর স্থান দিতে হবে। বিচার বিভাগ কর্তৃক সংবিধানের ব্যাখ্যা, আইনের বিষয়ে মতামত এবং আইন সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শকে প্রাধান্য দিতে হবে।

(চ) বিচার বিভাগের স্বাধীন সরক্ষণ: সরকার, বিরোধীদল, সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠী এবং সর্বসাধারণকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য তৎপর ও আগ্রহী হতে হবে। তবেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে।

Add a Comment