বাংলাদেশে গুম

কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হবে, আইনানুযায়ী শাস্তি ভোগ করবেন। কিন্তু গুম হয়ে যাবেন কেন? এটি সুস্পষ্টভাবে আইনের শাসনের পরিপন্থী। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাউকে তুলে নিয়ে যান না। কিন্তু গুম হয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনেরা বলছেন, তাঁদের সামনে থেকেই পুলিশ বা র‍্যাব পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গুম হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর মধ্য থেকে ভাগ্যগুণে যারা ফিরে এসেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা প্রায় অভিন্ন—চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া, অজ্ঞাত স্থানে দিনের পর দিন রাখা, ক্ষেত্রবিশেষে চাঁদা দাবি করা, মুখ খুললে মেরে ফেলার হুমকি ইত্যাদি। ভাগ্যগুণে যারা ফিরে আসেন, এসব নিয়ে তাঁরা আর মুখ খোলেন না।

গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে গুম হয়েছেন অন্তত ৯৭ জন। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত তিন বছরে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেওয়ার পর ২৬৭ জন নিখোঁজ হয়েছেন। কোনো সভ্য দেশে অব্যাহতভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দাবি করেছেন, গত নয় বছরে বিএনপির তিন শ নেতা কর্মী গুম হয়েছেন, যারা এখনো ফিরে আসেনি।

কারা গুম হচ্ছেন?
গত কয়েক বছরে বহু মানুষ গুম বা নিখোঁজ হয়েছেন। এই গুম হওয়া মানুষের মধ্যে যেমন বিরোধী দলের নেতা-কর্মী আছেন, তেমনি আছেন সরকার সমর্থক সংগঠনের স্থানীয় পদাধিকারীরাও।

সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক রিপোর্টেও বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এর আগে র‍্যাবের প্রধান বলেছিলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা নাকি ভুল শব্দ। শব্দটি ভুল নাকি শুদ্ধ তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে দেশের মানুষ চায় না কেউ গুম হয়ে যাক, ‘ক্রসফায়ারের’ নামে কেউ মারা যাক। এবং এসব ঘটনার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠুক।

সরকারের দাবি অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যদি গুমের সঙ্গে জড়িত না থাকেন, তাহলে কে বা কারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তা খুঁজে বের করছে না কেন? সরকার বক্তব্য দিয়ে বিদেশি সংস্থার রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করতে পারে, কিন্তু এই স্বজনহারা মানুষগুলোর অভিযোগ কীভাবে অস্বীকার করবে? আমরা চাই নিরপেক্ষ সংস্থা দিয়ে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা হোক।

মানুষ মারা গেলে বা নিহত হলে অন্তত লাশটি পাওয়া যায়। কিন্তু গুম হওয়া মানুষের কোনো চিহ্নই থাকে না। স্বাধীন বাংলাদেশে এ রকম গুম হওয়ার ঘটনা কেবল সরকারের অক্ষমতাই প্রকাশ করে না, জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জাও বাড়িয়ে দেয়। স্বজনদের আহাজারি শুনুন। গুম হওয়া মানুষগুলোকে খুঁজে বের করুন।

-প্রথম আলো থেকে।

পেপার ক্লিপিং

সরকার বলছে মানবাধিকার অগ্রগতি ‘চমৎকার’
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে জাতিসংঘ ফোরামের উদ্বেগ