বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট

রাষ্ট্রের কার্যপদ্ধতিতে কে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে ফরাসি রাষ্ট্র বিজ্ঞানী মন্টেস্কু রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন। তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য এ প্রস্তাব করেন।

  1. নির্বাহী বিভাগ
  2. আইন বিভাগ
  3. বিচার বিভাগ

ব্রিটিশ আমল
১৮৩১ সালে ব্রিটিশ ভারতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি কাজ আলাদাভাবে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। তখন থেকে পৃথক বিচার বিভাগের যাত্রা শুরু হয়।

পাকিস্তান আমল
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হলে। অন্যান্য বিভাগ থেকে বিচারবিভাগকে পৃথক করার জন্য কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ১৫ নম্বর দফা ছিল বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয় নি।

বাংলাদেশ আমল
১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। এ সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী

রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচারবিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন৷

কিন্তু ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের অধীন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে এক সামরিক ফরমান জারি করে অধঃস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রনে সুপ্রিম কোর্টের পরমর্শ গ্রহণের কথাটি সংযোজিত হয়।

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যান্য অনুচ্ছেদগুলো-

১০৯। হাইকোর্ট বিভাগের অধঃস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের উপর উক্ত বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা থাকিবে।

১১৬। বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচারবিভাগীয় দায়িত্বপালনে রত ম্যাজিষ্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল- নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) ও শৃংখলাবিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রীম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে।

১১৬ক। এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ এবং ম্যাজিষ্ট্রেটগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন।

সংবিধানে এত স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও ২০০৭ সালের পূর্বের কোন সামরিক সরকার, নির্বাচিত সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ উদ্যোগটি গ্রহণ করেননি।
২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় আসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের উদ্দেশ্যে তাঁর সরকার Code of Criminal Procedure(Amendment) Ordinacne-2007 জারি করেন। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পর ১ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারবিভাগের পৃথকীকরণ সম্পন্ন করেন। ফলে সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদের কার্যকারিতা প্রতিপন্ন হয়।

Add a Comment