একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা

একনায়কতন্ত্র এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা। এতে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত না থেকে একজন স্বেচ্ছাচারী শাসক বা দল বা শ্রেণির হাতে ন্যস্ত থাকে। এতে নেতাই দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাকে বলা হয় একনায়ক বা ডিকটেটর। একনায়কতান্ত্রিক শাসককে সহায়তা করার জন্য মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পরিষদ থাকে। কিন্তু তারা শাসকের আদেশ ও নির্দেশ মেনে চলে। শাসকের আদেশই আইন। এ ব্যবস্থায় শাসকের কারও কাছে জবাবদিহি থাকে না। এতে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। এই দলের নেতাই সরকারপ্রধান। তার ইচ্ছা অনুযায়ী দল পরিচালিত হয় এবং তার অন্ধ অনুসারীদের নিয়ে দল গঠিত হয়।

একনায়কতন্ত্রে গণমাধ্যমগুলো (রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি) নেতা ও তার দলের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এগুলো নিরপেক্ষভাবে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয় না। বরং সরকারি দলের গুণকীর্তনে ব্যবহৃত হয়। এ সরকারব্যবস্থায় আইন ও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। একনায়কের ইচ্ছা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন ও বিচারকার্য করা হয়। এক জাতি, এক দেশ, এক নেতা একনায়কতন্ত্রের আদর্শ। এতে মনে করা হয়, সবকিছু রাষ্ট্রের জন্য, এর বাইরে বা বিরুদ্ধে কিছু নয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া, ইতালি, জার্মানি, স্পেন প্রভৃতি দেশে একনায়কতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটে। ইতালির মুসোলিনি, জার্মানির হিটলার এবং স্পেনের ফ্রাংকো একনায়ক ছিলেন।

এক নায়কতন্ত্রের সুবিধা

একনায়কতন্ত্র একচেটিয়া ও সর্বাত্মক ধরনের সরকার হলেও এর কিছু গুণ আছে। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল-
যোগ্য নেতৃত্বঃ একনায়ক সাধারণত অসাধারণ গুণাবলীর অধিকারী হন। তাঁর মাঝে এমন এক সম্মোহনী নেতৃত্ব থাকে যা সকলকে আকৃষ্ট করে। রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর দক্ষতা অনেক।
দ্রুত কর্ম সম্পাদনঃ তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বেসর্বা। তাই তিনি কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে কোন বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
সাংগঠনিক সরলতাঃ একনায়কতন্ত্র সরল প্রকৃতির শাসন কাঠামোর অধিকারী। এখানের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নেই। এক জনের সিদ্ধান্ত সকল কার্যকর হয়। কাজেই স্তরে স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বহু প্রশাসনিক ধাপের প্রয়োজন হয় না। ফলে নির্বাহী খরচ কম হয়।

একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দোষ

একনায়কতন্ত্র চরম স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা। এর দোষগুলো নিম্নরূপ।
১. গণতন্ত্রবিরোধী: একনায়কতন্ত্র গণতন্ত্র বিরোধী। এটি ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না, যা গণতন্ত্রের মূল কথা। এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করে। ফলে ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
২. স্বৈরাচারী শাসন: একনায়কতন্ত্র স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করে। কারণ একনায়ককে কারও নিকট জবাবদিহি করতে হয় না। তার কথাই আইন। এতে ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তা ও মুক্ত বুদ্ধি চর্চার সুযোগ নেই। একনায়কতন্ত্র বস্তুত একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা।
৩. নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টির অন্তরায়: এ শাসনব্যবস্থ একক নেতার নেতৃত্বে চলে বলে বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে উঠার সুযোগ থাকে না। আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় রাজনৈতিক সচেতনতাও তৈরি হয় না।
৪. বিপ্লবের সম্ভাবনা: এ শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নেই বলে সর্বদা বিপ্লবের ভয় থাকে। অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা ও গণ-অসন্তোষের কারণে একনায়কতন্ত্র বেশি দিন টিকতে পারে না।
৫. বিশ্বশান্তির বিরোধী: একনায়কতন্ত্রে উগ্র জাতীয়তাবোধ ধারণ ও লালন করা হয়। ক্ষমতা ও ক্ষমতার লোভ একনায়কের মধ্যে যুদ্ধাংদেহী মনোভাব সৃষ্টি করে। হিটলার এ ধরনের মনোভাব পোষণ করে সারা পৃথিবীতে ধ্বংস ডেকে এনেছিলেন। এ ধরনের মনোভাব আন্তর্জাতিক শান্তির পরিপন্থী।

একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের বেদীমূলে উৎসর্গ করে। এখানে ব্যক্তি রাষ্ট্রের জন্য, রাষ্ট্র ব্যক্তির জন্য নয়। তাই বর্তমান বিশ্বে কোনো রাষ্ট্র একনায়ককে সমর্থন করে না।


👉 Read More...👇

Add a Comment