একেই কি বলে সভ্যতা

‘একেই কি বলে সভ্যতা’ দুই অঙ্কের নাটক। প্রথম অঙ্কে দুটি গর্ভাঙ্ক এবং দ্বিতীয় অঙ্কে দুটি গর্ভাঙ্ক রয়েছে।

নব্য ইংরেজি শিক্ষিতরা নিজেদের ইংরেজ করে তোলার প্রাণান্তকর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়। যেন সভ্য হয়ে ওঠার এ এক বিশেষ প্রক্রিয়া। প্রহসনে এদের চিন্তা ও ক্রিয়ার সুনিপুণ নকশী কাঁথা বুনেছেন রচয়িতা।

জমিদারবাবুরা গ্রামে প্রজাদের শোষণ করেন, তার থেকে যে অর্থ আয় হয় তাতে পুত্রকে কলকাতা পাঠান শিক্ষিত করে তোলার জন্য। কিন্তু পুত্র মোসাহেবদের নিয়ে উৎসব করে বেড়ায়, চেষ্টা চলে ইংরেজ হবার।
বৈষ্ণব পিতার সন্তান ছুটে যায় মদের আসরে বারবিলাসিনীর নূপুরের শব্দ শুনতে। ধর্ম, জাত, মানবিকবোধ আর মানব সম্পর্কের চিরায়ত শৃংখলা হারায় নেশার ঘোরে। ইংরেজদের ভাষায় অসভ্য বর্বর বাঙালির চোখে সভ্যতার পিঠে দগদগে ঘা স্পষ্ট হয়।
এতো শুধু একপক্ষ, অন্যপক্ষে শাসকের মুখও খুঁজে পাওয়া যায় প্রহসনে। ঘুষখোর ইংরেজ আমলাদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রহসনে ‘সারজন’ চরিত্রটি এসেছে।
পরবর্তীতেও আমলাদের এই চরিত্রের বদল হয়নি। ইংরেজ শোষণের বুদ্ধিদীপ্ত এবং কৌশলী বর্ণনা হিসেবে একে চিহ্নিত করা যায়। এখানে শুধুমাত্র আমলাদের মুখচ্ছবিই আসেনি, ধর্মের ভেকধারীদেরও কথা এসেছে এবং তা আরো ভয়াবহ।

জমিদারনন্দন কালী এবং নব’র ধর্মবিরুদ্ধ সব কার্যকলাপ জানার পরও বাবাজি চুপ করে থাকেন দক্ষিণার বিনিময়ে। অথচ ধর্মের আলোয়ানের কারণেই তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পান তিনি। ধর্ম আরও কয়েকটি স্থানে এসেছে। প্রহসন রচনার সতের বছর পূর্বে মধুসূদন ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাই সনাতন ধর্ম ও ইসলাম সম্পর্কিত তার ধারণা নৈর্ব্যক্তিক বলেই ধর্মের ভেক ধরাকে তীক্ষ্ম ও তীব্র আক্রমণ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে।

Add a Comment