রামাই পণ্ডিত

বাংলার ধর্মপূজা পদ্ধতির উৎস সন্ধান করলে জানা যায় যে, ‘মন্ত্রযান’ অথবা সাধারণভাবে ‘বজ্রযান’ নামে পরিচিত তান্ত্রিক বৌদ্ধমতের কিছু উপাদান থেকে এবং তান্ত্রিক হিন্দুমতের (শৈব ধর্ম) কিছু প্রথা পদ্ধতি থেকে ধর্মপূজা পদ্ধতির উদ্ভব। বাংলাদেশে হিন্দু আমলের শেষভাগে মহাযান বৌদ্ধমত হিন্দু তান্ত্রিকদের কিছু ধর্মীয় আচার-পদ্ধতি এবং মিশ্র লৌকিক বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয়। নাথ ধর্মের মধ্যে প্রকাশ পায় কিভাবে পরবর্তীকালের বৌদ্ধধর্ম হিন্দু তান্ত্রিক কিছু উপাদান গ্রহণ করে। ‘ধর্মপূজা বিধান’ নামে অভিহিত ‘শুন্যপুরাণ’ কাব্যে ধর্মপূজা পদ্ধতির উৎপত্তি সম্বন্ধে বলা হয়েছে।

ধর্মপূজার প্রতিষ্ঠাতা রামাই পণ্ডিত একজন ব্রাহ্মণছিলেন। অতি অল্প বয়সে তিনি তাঁর পিতাকে হারান। তিনি সময়মতো পিতার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করতে না পারায় গোঁড়া ব্রাহ্মণসমাজ তাকে জাতিচ্যুত করেন। কোনো ব্রাহ্মণপুরোহিতই তার পৈতা অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে আসেন নাই। তার প্রার্থনায় ধর্মঠাকুর একজন বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে আগমণ করেন এবং তাকে একটি তাম্র পৈতা দান করেন। তিনিই রামাই পণ্ডিতকে ধর্মপূজার আদর্শে দীক্ষিত করেন। শূন্যপূরাণে ‘নিরঞ্জনের রুষ্মা’ বলে একটি অংশ আছে। এই অংশ থেকেই শূন্যপূরাণ ও ধর্মঠাকুরের সঙ্গে ইসলামের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। জানা যায় জাজপুর ও মালদহে সদ্ধর্ধীরা দ্বিজগণ কর্তৃক বিনষ্ট হচ্ছিল। ‘ই বড় হইল অনাচার’। তখন ধর্মকে তারা ডাকলেন ‘সভে বলে রাখ ধর্ম’ অন্তর্যামী বৈকুণ্ঠপতি ধর্ম সমস্ত দেবদেবী সহ ভক্তকে রক্ষা করতে যবনরূপে অবতীর্ণ হলেন। শূন্যপূরাণের ‘নিরঞ্জনের রুষ্মা’ অংশ থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে। যথা:

‘জাজপুর পুরবাদি
সোলসঅ ঘর বেদি
বেদি লয় কন্নয় যুন
দখিন্যা মাগিতে যাঅ
জার ঘরে নাহি পাঅ
সাঁপ দিয়া পুড়াএ ভুবন
ধর্ম্ম হৈল্যা জবনরুপি
মাথাএত কাল টুপি
হাতে সোভে ত্রিরূচ কামান
চাপিআ উত্তম হয়
ত্রিভুবনে লাগে ভয়
খোদায় বলিয়া এক নাম
নিরঞ্জন নিরাকার
হৈলা ভেস্ত অবতার
মুখেতে বলেত দম্বদার (দম মাদার)।’

Add a Comment