বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ

  • অন্ধকার যুগের সাহিত্যের নিদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করুন। (৩৭তম বিসিএস লিখিত)
  • বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলতে কী বুঝায়? (৩০তম বিসিএস লিখিত)

বাংলা সাহিত্যের ১২০০-১৩৫০ খ্রি. পর্যন্ত সময়কে “অন্ধকার যুগ” বা “বন্ধ্যা যুগ” বলে কেউ কেউ মনে করেন। অনুমান করা হয়, তুর্কি বিজয়ের ফলে মুসলিম শাসনামলের সূচনার পটভূমিতে নানা অস্থিরতার কারণে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সৃষ্টি হয়নি। ড. হুমায়ুন আজাদ তাঁর “লাল নীল দীপাবলী” গ্রন্থে (পৃ. ১৭) লিখেছেন-

“১২০০ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রচিত কোন সাহিত্য কর্মের পরিচয় পাওয়া যায়না বলে এ-সময়টাকে বলা হয় ‘অন্ধকার যুগ’। পণ্ডিতেরা এ-সময়টাকে নিয়ে অনেক ভেবেছেন, অনেক আলোচনা করেছেন, কিন্তু কেউ অন্ধকার সরিয়ে ফেলতে পারেন নি। এ- সময়টির দিকে তাকালে তাই চোখে কোন আলো আসেনা, কেবল আঁধার ঢাকা চারদিক।”

কিন্তু, ওয়াকিল আহমদ তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যের পুরাবৃত্ত’ (পৃ. ১০৫)-এ লিখেছেন-

“বাংলা সাতিহ্যের কথিত ‘অন্ধকার যুগ’ মোটেই সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্বের যুগ ছিল না। ধর্ম -শিক্ষা শিল্প চর্চার দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত ছিল, তারা সীমিত আকারে হলেও শিক্ষা সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে, কি হিন্দু কি মুসলমান কেউ লোকভাষা বাংলাকে গ্রহণ করেননি। বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন না থাকার এটাই মুখ্য কারণ।”

বর্তমানে অনেক গবেষকই এ সময়কে অন্ধকার যুগ বলতে নারাজ। কেননা তাঁরা ঐতিহাসিক ভাবে বিভিন্ন প্রমান সহ বলতেছেন যে, সংখ্যায় কম হলেও এ সময়েও সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে, আর এ সংখ্যা কমের জন্য কোনভাবেই মুসলিম/তুর্কি শাসন দায়ী নয়।

এসময়ের সাহিত্য নিদর্শন:
১. প্রাকৃত ভাষার গীতি কবিতার সংকলিত গ্রন্থ ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’
২. রামাই পন্ডিত রচিত ‘শূন্যপুরাণ’ (গদ্যপদ্য মিশ্রিত)
৩. হলায়ুধ মিশ্র রচিত ‘সেক শুভোদয়া’ (গদ্যপদ্য মিশ্রিত)
৪. ডাক ও খনার বচন

‘নিরঞ্জনের উষ্মা’ শূন্যপুরাণ এর অন্তর্গত একটি কবিতা।

তাই বলা যায় মধ্যযুগের অর্থাৎ ১২০০ খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ ত্রয়োদশ শতকের শুরুর দিকে ‘সেক শুভোদয়া’ এবং শেষের দিকে ‘শূন্যপুরাণ’র অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকা অবস্থায় এ সময়টাকে তথাকথিত ‘অন্ধকার যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি ‘অপবাদ’ লেপনের অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনা।

Add a Comment