চর্যাপদের কবিগণ

চর্যাপদের পদকর্তাদের সম্পর্কে ধারণা দিন। সর্বাধিক পদ রচয়িতার সম্পর্কে সংখিপ্ত পরিচয় দিন। (৩০তম বিসিএস লিখিত)

মূলকথাঃ চর্যার কবিগণ সিদ্ধাচার্য নামে পরিচিত। চর্যাপদের মোট কবির সংখ্যা ২৩, মতান্তরে ২৪ জন। ২৪, ২৫ ও ৪৮ সংখ্যক পদগুলি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুঁথিতে না থাকলেও ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী আবিষ্কৃত তিব্বতি অনুবাদে পাওয়া যায়। চর্যাকার তান্ত্রীপা ও লাড়ীডোম্বীপা এঁদের কোন পদ পাওয়া যায়নি। শবর পা চর্যার শ্রেষ্ঠ কবি।

Dombipa
Dombipa

চর্যার কবিগণ সিদ্ধাচার্য নামে পরিচিত; সাধারণত বজ্রযানী সহজযানী আচার্যগণই এই নামে অভিহিত হতেন। তিব্বতি ও ভারতীয় কিংবদন্তিতে এরাই ‘চৌরাশি সিদ্ধা’ নামে পরিচিত। তবে এই ৮৪ জন সিদ্ধাচার্য আসলে কারা ছিলেন তা সঠিক জানা যায় নি।

চর্যাপদে কবি সংখ্যা নিয়েও মতভেদ আছে। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ তাঁর ‘Buddhist Mystic Songs’ গ্রন্থে ২৩ জন কবির কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে সুকুমার সেন ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (১ম খণ্ড)’ গ্রন্থে ২৪ জন কবির কথা উল্লেখ করেছেন। বিশিষ্ট পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন নেপাল-তিব্বতে প্রাপ্ত তালপাতার পুঁথিতে আরো করেকজন নতুন কবির চর্যাগীতি পেয়ে ‘দোহা-কোষ (১৯৫৭)’ গ্রন্থে সংযোজন করেছেন। ফলে এককথায় বলা যায়, চর্যাপদের মোট কবির সংখ্যা ২৩, মতান্তরে ২৪ জন।

চর্যার কবিরা ছিলেন পূর্ব ভারত ও নেপাল রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসী। কেউ পূর্ববঙ্গ, কেউ উত্তরবঙ্গ, কেউ বা রাঢ়ের অধিবাসী ছিলেন। কেউ কেউ বিহার, কেউ ওড়িশা, কেউ বা আবার অসম বা কামরূপের বাসিন্দাও ছিলেন। এঁরা ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, ক্ষত্রিয়, বণিক এমনকি অন্ত্যজ শ্রেণী থেকেও এসেছিলেন। কেউ কেউ রাজবংশজাতও ছিলেন। এঁরা পূর্বাশ্রমের পিতৃপ্রদত্ত নাম ত্যাগ করেছিলেন বলে নাম দেখে এঁদের জাতি স্থির করা যায় না। এঁরা হিন্দুধর্মের সনাতন শাস্ত্রবিধান মানতেন না বলে এঁদের বেদবিরোধী ও নাস্তিক আখ্যা দেওয়া হয়। সাধনার নামে গোপনে কেউ কেউ যৌনাচারও করতেন বলে আধুনিক গবেষকগণ মত প্রকাশ করেন।

Mahidharpa
Mahidharpa

আবিষ্কৃত পুঁথিটিতে ৫০টি চর্যায় মোট ২৪ জন সিদ্ধাচার্যের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন: লুই, কুক্কুরী, বিরুআ, গুণ্ডরী, চাটিল, ভুসুকু, কাহ্ন, কাম্বলাম্বর, ডোম্বী, শান্তি, মহিত্তা, বীণা, সরহ, শবর, আজদেব, ঢেণ্ঢণ, দারিক, ভাদে, তাড়ক, কঙ্কণ, জঅনন্দি, ধাম, তান্তী পা, লাড়ীডোম্বী। ২৪, ২৫ ও ৪৮ সংখ্যক পদগুলি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুঁথিতে না থাকলেও ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী আবিষ্কৃত তিব্বতি অনুবাদে এগুলির রচয়িতার নাম উল্লিখিত হয়েছে যথাক্রমে কাহ্ন, তান্তী পা ও কুক্কুরী। এই নামগুলির অধিকাংশই তাঁদের ছদ্মনাম এবং নামের শেষে তাঁরা ‘পা'(<পদ) শব্দটি সম্ভ্রমবাচক অর্থে ব্যবহার করতেন। শবর পা চর্যার শ্রেষ্ঠ কবি। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে লুইপা চর্যার আদি কবি। কিন্তু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লা দেখিয়েছেন যে শবরপা প্রাচীনতম/আদি চর্যাকার। আবার রাহুল সাংকৃত্যায়ন সরহকে আদিসিদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।তান্ত্রীপা ও লাড়ীদোম্বী পার কোন পদ পাওয়া যায় নি।

বাঙালি কবিঃ বিরুআপা, কুক্কুরিপা, লুইপা, ডোম্বীপা, শবরপা, ধামপা, জঅনন্দপা, মৎসেন্দ্রনাথ।


👉 Read More...👇

Add a Comment