বিসর্গ সন্ধি

বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে টি।

সংস্কৃত সন্ধির নিয়মে পদের অন্তস্থিত র্‌ ও স্ অনেক ক্ষেত্রে অঘােষ উষ্মধ্বনি অর্থাৎ হ ধ্বনিরূপে উচ্চারিত হয় এবং তা বিসর্গ রূপে লেখা হয়। র্‌ ও স্ বিসর্গ ব্যঞ্জন ধ্বনিমালার অন্তর্গত। সে কারণে বিসর্গ সন্ধি ব্যঞ্জন সন্ধির অন্তর্গত। বস্তুত বিসর্গ র্‌ এবং স্-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। বিসর্গকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে:

১. র – জাত বিসর্গ ও
২. স্– জাত বিসর্গ।

১. র্‌- জাত বিসর্গ: র্‌ স্থানে যে বিসর্গ হয় তাকে বলে র – জাত বিসর্গ । যেমন : অন্তর- অন্তঃ, প্রাতর- প্রাতঃ, পুনর – পুনঃ ইত্যাদি।

২. স্-জাত বিসর্গ: স্ স্থানে যে বিসর্গ হয় তাকে বলে স্-জাত বিসর্গ। যেমন : নমস্- নমঃ, পুরস্-পুরঃ, শিরস্– শিরঃ ইত্যাদি।

বিসর্গের সাথে অর্থাৎ র্‌ ও স্-এর সাথে স্বরধ্বনির কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয় তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। বিসর্গ সন্ধি দুইভাবে সাধিত হয়:
১. বিসর্গ + স্বর এবং ২. বিসর্গ + ব্যঞ্জন।

১. বিসর্গ ও ব্যঞ্জন/স্বরের সন্ধি:
ক.
অ-কার+ বিসর্গ + অ/আ, বর্গের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম অথবা য, র, ল, ব, হ এরূপে থাকলে বিসর্গ ও-কার হয়। ততঃ+অধিক=ততোধিক; মনঃ+গড়া= মনোগড়া, (মনগড়া নয়।) সদ্যঃ+জাত = সদ্যোজাত (৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) ,
এগুলো সব স্‌-জাত বিসর্গের উদাহরণ। অর্থাৎ এখানে স্‌-জাত বিসর্গ ও-কার হয়ে এসেছে।

এই নিয়মের অধীনেই যদি বিসর্গটি র-জাত হয় তবে র অথবা রেফ হয়ে ফিরে আসে। যেমন- পুনঃ+আগমন=পুনরাগমন, প্রাতঃ+আশ = প্রাতরাশ (২৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) , অন্তঃ+ধান=অন্তর্ধান, পুনঃ+বার=পুনর্বার, অন্তঃ + গত = অন্তর্গত, পুনঃ+ আয় = পুনরায়, পুনঃ + উক্ত = পুনরুক্ত, অহঃ + অহ = অহরহ। এরূপ — পুনর্জন্ম, পুনর্বার, অন্তর্ভুক্ত, পুনরপি, অন্তবর্তী ইত্যাদি।

খ.
অ-আ ভিন্ন অন্য স্বর + বিসর্গ + যেকোন স্বরবর্ণ, বর্গের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম অথবা য, র, ল, ব, হ এরূপে থাকলে ‘র’ ফিরে আসে-
দুঃ+অবস্থা=দুরবস্থা(দুরাবস্থা নয়) (৩৯তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
নিঃ+অবধি=নিরবধি(নিরোবধি নয়)
নিঃ+জল=নির্জল।
দুঃগতি=দুর্গতি।
এই চারটি উদাহরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে বিসর্গের পরে স্বরবর্ণ থাকলে ‘র’ অবিকৃত থাকে, আর ব্যঞ্জন থাকলে তা রেফ হয়।

গ.
বিসর্গ + চ/ছ=শ হয়, তাই শিরঃ+ছেদ=শিরশ্ছেদ(শিরচ্ছেদ নয়)। এই নিয়মে দুঃ+চরিত্র=দুশ্চরিত্র। কিন্তু দুঃ+আচার=দুরাচার; (ক) এর নিয়মে।

ঘ.
বিসর্গ + ত/থ=স হয়। যেমন দুঃ+থ=দুস্থ; ইতঃ+ততঃ=ইতস্ততঃ > ইতস্তত।

ঙ.
বিসর্গ + ট/ঠ= ষ হয়। যেমন- ধনুঃ+টংকার=ধনুষ্টংকার, নিঃ+ঠুর= নিষ্ঠুর।

চ.
অ/আ + বিসর্গ + ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গটি ‘স’ হয়। যেমন- পুরঃ+কার=পুরস্কার।

ছ.
অ/আ ভিন্ন অন্যস্বর + বিসর্গ + ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গটি ‘ষ’ হয়। যেমন- আবিঃ+কার=আবিষ্কার।

জ.
র-জাত বিসর্গের পরে আবার র থাকলে, বিসর্গটি লোপ পায় এবং পরের অংশে দীর্ঘ স্বর আসে। যেমন- নিঃ+রব=নীরব(নিরব নয়)
নিঃ+রোগ=নীরোগ।
নিঃ+রস=নীরস
চক্ষু+রোগ=চক্ষূরোগ(চক্ষুরোগ নয়)

ঝ.
বিসর্গ + স্ত/স্থ/স্প এরূপে থাকলে বিসর্গটি লোপ পায়। যেমন- মনঃ+স্থ=মনস্থ; অন্তঃ+স্থ=অন্তস্থ; বহিঃ+স্থ=বহিস্থ; নিঃ+স্তব্ধ=নিস্তব্ধ ইত্যাদি।

ঞ.
অ + বিসর্গ + অ ভিন্ন অন্য স্বর শুধু বিসর্গটি লোপ পাবে কোন সন্ধি হবে না। যেমন- অতঃ+এব=অতএব(অতেব নয়); শিরঃ+উদ্ধার=শিরউদ্ধার; যশঃ+ইচ্ছা=যশইচ্ছা(যশেচ্ছা নয়)

Add a Comment