বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ

বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে টি।

সমানাধিকরণ বহুব্রীহিঃ পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন : হত হয়েছে শ্রী যার = হতশ্রী, খোশ মেজাজ যার = খোশমেজাজ, নব(নতুন) যে অন্ন= নবান্ন। (২৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) এরকম : হৃতসর্বস্ব, উচ্চশির, পীতাম্বর, নীলকণ্ঠ, জবরদস্তি, সুশীল, সুশ্রী, বদবত, কমবখৃত ইত্যাদি।

ব্যধিকরণ বহুব্রীহিঃ বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয়, তবে তাকে বলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি। যথা : আশীতে (দাঁতে) বিষ যার= আশীবিষ, কথা সর্বস্ব যার = কথাসর্বস্ব। পরপদ কৃদন্ত বিশেষণ হলেও ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন : দুই কান কাটা যার = দু কানকাটা, বোটা খসেছে যার = বোটাখসা। অনুরূপভাবে – ছাপোষা, পা-চাটা, পাতা-চাটা, পাতাছেঁড়া, ধামাধরা ইত্যাদি।

ব্যতিহার বহুব্রীহিঃ ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। এ সমাসে পূর্বপদে ‘আ’ এবং উত্তরপদে ‘ই’ যুক্ত হয়। যথা : হাতে হাতে যে যুদ্ধ = হাতাহাতি, কানে কানে যে কথা = কানাকানি (৩৯তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) । এমনি ভাবে চুলাচুলি, কাড়াকাড়ি, গালাগালি, দেখাদেখি, কোলাকুলি, লাঠালাঠি (২৬, ১৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) , হাসাহাসি, গুঁতাগুঁতি, ঘুষাঘুষি ইত্যাদি।

নঞ্‌ বহুব্রীহিঃ বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ্‌ (না অর্থবোধক) অব্যয় যোগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ্‌ বহুব্রীহি বলে। নঞ্‌ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয়। যেমন : ন (নাই) জ্ঞান যার = অজ্ঞান, বে (নাই) হেড যার = বেহেড, না (নাই) চারা (উপায়) যার = নাচার। নি (নাই) ভুল যার = নির্ভুল, না (নয়) জানা যা = নাজানা, অজানা ইত্যাদি। এরকম-নাহক, নিরুপায়, নির্ঝঞ্ঝাট, অবুঝ, অকেজো, বেপরোয়া, বেহুঁশ, অনন্ত, বেতার ইত্যাদি।

মধ্যপদলোপী বহুব্রীহিঃ বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনো অংশ যদি সমস্তপদে লোপ পায়, তবে তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে। যেমন : বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর = বিড়ালচোখ, হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি। এমনি ভাবে – গায়ে হলুদ, মেনিমুখো ইত্যদি।

প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহিঃ যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি । যথা- এক দিকে চোখ (দৃষ্টি) যার = একচোখা (চোখ+আ), ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখো (মুখ+ও), নিঃ (নেই) খরচ যার = নি-খরচে (খরচ+এ)। এরকম -দোটানা, দোমনা, একগুঁয়ে, অকেজো, একঘরে, দোনলা, দোতলা, ঊনপাঁজুরে ইত্যাদি।

অলুক বহুব্রীহিঃ যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনো পরিবর্তন হয় না (অ=নাই, লুক=লোপ, অর্থাৎ বিভক্তি লোপ পায় না), তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে। অলুক বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষণ হয়। যথা : মাথায় পাগড়ি যার = মাথায়পাগড়ি, গলায় গামছা যার= গলায়গামছা (লোকটি)। এরূপ – হাতে-ছড়ি, কানে-কলম, গায়ে-পড়া, হাতে-বেড়ি, মাথায়-ছাতা, মুখে-ভাত, কানে-খাটো ইত্যাদি।

সংখ্যাবাচক বহুব্রীহিঃ পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বোঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়। এ সমাসে সমস্তপদে ‘আ’, ‘ই’ বা ‘ঈ’ যুক্ত হয়। যথা – দশ গজ পরিমাণ যার =দশগজি, চৌ (চার) চাল যে ঘরের = চৌচালা । এরূপ —চারহাতি, তেপায়া ইত্যাদি। কিন্তু, সে (তিন) তার (যে যন্ত্রের) = সেতার (বিশেষ্য)। অর্থাৎ এখানে ‘ই’ বা ‘আ’ এসে ‘সেতারি’ বা ‘সেতারা’ হয়নি।

নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহিঃ আরও কিছু বহুব্রীহি সমাস আছে যাদেরকে উপরের কোন নিয়োমে ফেলা যায় না। এগুলোকে নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি বলে যেমন- দু দিকে অপ(পানি) যার = দ্বীপ, অন্তর্গত অপ যার = অন্তরীপ, নরাকারের পশু যে = নরপশু, জীবিত থেকেও যে মৃত = জীবন্মৃত, পণ্ডিত হয়েও যে মূর্খ = পণ্ডিতমূর্খ ইত্যাদি।

Add a Comment