কর্তৃ কারক

কর্তৃ বা কর্তা কারক কাকে বলে?: বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্তা বলে। আর কর্তার কারকই হল কর্তৃ কারক।

ক্রিয়ার সঙ্গে ‘কে’ বা ‘কারা’ যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই কর্তৃকারক। যেমন:-
খোকা বই পড়ে। (কে পড়ে? খোকা – কর্তৃকারক)।
মেয়েরা ফুল তোলে। (কে তোলে? মেয়েরা – কর্তৃকারক)।
সতর্কতাঃ কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের বাক্যে এই নিয়ম খাটবে না। সেক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিচে উদাহরণ দেওয়া আছে।

কর্তৃকারকের প্রকারভেদ

ক. কর্তৃকারক বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নিম্নরূপ হয়ে থাকে:
১. মুখ্য কর্তা: যে নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে, সে মুখ্য কর্তা। যেমন- ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।

২. প্রযোজক কর্তা: মূল কর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায়, তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।

৩. প্রযোজ্য কর্তা: মূল কর্তার করণীয় কার্য যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলা হয়। ওপরের বাক্যে ‘ছাত্র’ প্রযোজ্য কর্তা। তদ্রুপ- রাখাল (প্রযোজক কর্তা) গরুকে (প্রযোজ্য কর্তা) ঘাস খাওয়ায়।

৪. ব্যতিহার কর্তা: কোনো বাক্যে যে দুটো কর্তা একত্রে একজাতীয় ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন- বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। রাজায়-রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত।

৫. সমধাতুজ কর্তাঃ মূল ক্রিয়াপদ থেকে যে কর্তা সৃষ্টি হয় তাকে সমধাতুজ কর্তা বলে। যেমন- বাজনা বাজে দূরে।

৬. নিরপেক্ষ কর্তাঃ একই বাক্যে যখন একসাথে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার হয় এবং তাদের আলাদা আলাদা কর্তা থাকে, তখন তাদেরকে নিরপক্ষ কর্তা বলে। রহিম জাগলে আমি ঘুমাবো।

৭. অনুক্ত কর্তাঃ উত্তম ও মধ্যম পুরুষের কর্তা অনেক সময় অনুক্ত থাকতে পারে। যেমন- (আমি) বাড়ি যাব। (তুমি) বাড়ি যাও।

খ. বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন রকমের হতে পারে:
১. কর্মবাচ্যের কর্তা (কর্মপদের প্রাধান্যসূচক বাক্যে): পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।
২. ভাববাচ্যের কর্তা (ক্রিয়ার প্রাধান্যসূচক বাক্যে): আমার যাওয়া হবে না।
৩. কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা (বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয়): বাঁশি বাজে। কলমটা লেখে ভালো।

কর্তৃ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির উদাহরণঃ

ক) প্রথমা বা শূণ্য বা অ বিভক্তি

গগনে গরজে মেঘ
ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে।
জল পড়ে, পাতা নড়ে।
শ্রদ্ধাবান লভে জ্ঞান অন্যে কভু নয়।
সাপুড়ে সাপ খেলায়।
মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।
রাখাল গরুকে ঘাস খাওয়ায়।

(খ) দ্বিতীয়া বা কে বিভক্তি

বশিরকে যেতে হবে।

(গ) তৃতীয়া বা দ্বারা বিভক্তি

ফেরদৌসী কর্তৃক শাহনামা রচিত হয়েছে।
নজরুল কর্তৃক অগ্নিবীণা রচিত হয়।
পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।

(ঘ) পঞ্চমী বিভক্তি

আমা হতে এ কাজ হবে না সাধন।

(ঙ) ষষ্ঠী বা র বিভক্তি

আমার যাওয়া হয় নি।

(চ) সপ্তমী বা এ বিভক্তি

গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল।
দশে মিলে করি কাজ।
বাপে না জিজ্ঞাসে, মায়ে না সম্ভাষে।
পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়।
বাঘে-মহিষে খানা একঘাটে খাবে না।
রাজায়-রাজায় লড়াই।
গরুতে দুধ দেয়। গরুতে গাড়ি টানে।
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কীসে?

Add a Comment