অপভ্রংশ

অপভ্রংশ অর্থ, যা সাধুভাষা থেকে ভ্রষ্ট এই অর্থে একে অপভাষাও বলা হয়। অন্য অর্থে ব্যাকরণদুষ্ট পদ, অশুদ্ধ কথা।

খ্রিষ্ট-পূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে- বিশিষ্ট বৈয়াকরণ পতঞ্জলি তাঁর মহাভাষ্যে. প্রাচীন ভারতীয় প্রাকৃত ভাষাকে অপভ্রংশ নামে অভিহিত করেছিলেন। তিনি সংস্কৃত ভাষার বিচারে প্রাকৃতজনের ভাষাকে অধঃপতিত ভাষা হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর মতে- অপভ্রংশ ছিলো শাস্ত্রহীনের ভাষা বা অশিষ্ট লোক-সাহিত্যের ভাষা। পতঞ্জলি যাকে অপভ্রংশ বলতেন, বর্তমানে তাদেরকে পালি ও প্রাকৃত বলা হয়। কোন কোন প্রাচীন বৈয়াকরণ অপভ্রংশকে আলাদা ভাষা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। তবে বর্তমান ভাষা গবেষণায় অপভ্রংশকে প্রাকৃতের শেষ স্তর হিসেবেই গণ্য করা হয়। বর্তমান ভাষাবিদদের মতে সমস্ত প্রাকৃত ভাষারই শেষ স্তরটি হল অপভ্রংশ এবং এই অপভ্রংশগুলি থেকেই সমস্ত নব্য ইন্দো-আর্য ভাষা উদ্ভূত হয়েছিল।

এই অপভ্রংশ স্তরের অপেক্ষাকৃত আধুনিক রূপকে সুকুমার সেন নাম দিয়েছেন ‘অবহট্‌ঠ’। তাই অপভ্রংশ ও অবহট্‌ঠ প্রায় সমার্থক শব্দ।

উদাহরণস্বরূপ, পূর্ব ভারতে প্রচলিত মাগধী প্রাকৃত ভাষা থেকে পূর্বী অপভ্রংশ উদ্ভূত হয়েছিল এবং সেই পূর্বী অপভ্রংশ থেকে মগহী, মৈথিলী ও ভোজপুরী—এই তিনটি বিহারী ভাষা এবং বাংলা, অসমীয়া ও ওড়িয়া—এই তিনটি গৌড়ীয় ভাষার উৎপত্তিলাভ ঘটে। অন্যদিকে, পশ্চিমের শৌরসেনী অপভ্রংশ থেকে হিন্দি ও অন্যান্য নব্য ইন্দো-আর্য ভাষার উদ্ভব হয়। ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মতে গৌড়ীয় প্রাকৃতের পরবর্তীস্ত্র গৌড় অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি।

Add a Comment