সম্প্রদান কারক

যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে কিছু দেয়া হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে। ‘কাকে দান করা হল’ প্রশ্নের উত্তরই হলো সম্প্রদান কারক।

সম্প্রদান কারকের নিয়ম অন্যান্য নিয়মের মতোই সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকেই এসেছে। তবে অনেক বাংলা ব্যাকরণবিদ/ বৈয়াকরণ একে আলাদা কোন কারক হিসেবে স্বীকার করেন না। তারা একেও কর্ম কারক হিসেবেই গণ্য করেন। কর্মকারক ও সম্প্রদান কারকের বৈশিষ্ট্যও একই। কেবল স্বত্ব ত্যাগ করে দান করার ক্ষেত্রে কর্মকারক হিসেবে গণ্য না করে কর্মপদটিকে সম্প্রদান কারক হিসেবে গণ্য করা হয়।
যেমন- ধোপাকে কাপর দাও। এখানে স্বত্ব ত্যাগ করা হয়নি। তাই এটি সম্প্রদান নয়।
শামিম সাহেব ডাকাতদের তার রোলেক্স ঘড়ি দিলেন। এখানে তিনি বাধ্য হয়ে দিয়েছেন দান নয়।

সম্প্রদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তির বদলে চতুর্থী বিভক্তি যুক্ত হয়। চতুর্থী বিভক্তি আর কোথাও যুক্ত হয় না। অর্থাৎ, ‘কে/ রে’ বিভক্তি দুটি সম্প্রদান কারকের সঙ্গে থাকলে তা চতুর্থী বিভক্তি। অন্য কোন কারকের সঙ্গে থাকলে তা দ্বিতীয়া বিভক্তি।

তবে কোথাও নিমিত্তার্থে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হলে তা চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন- বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল। (নিমিত্তার্থে চতুর্থী বিভক্তি) তিনি হজে গেছেন। (নিমিত্তার্থে সপ্তমী বিভক্তি) ।

সম্প্রদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

প্রথমা বা ০ বিভক্তি
গুরু দক্ষিণা দাও।
দিব তোমা শ্রদ্ধা ভক্তি।
ভিক্ষা দাও দেখিলে ভিক্ষুক
চতুর্থী বা কে বিভক্তি
দরিদ্রকে দান করো।
ভিখারিকে ভিক্ষা দাও।
দরিদ্রকে ধন দাও। (স্বত্বত্যাগ করে না দিলে কর্ম কারক হবে। যেমন- ধোপাকে কাপড় দাও)।
ষষ্ঠী বা র বিভক্তি
ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দাও।
দেশের জন্য প্রাণ দাও।
সপ্তমী বা এ বিভক্তি
সৎপাত্রে কন্যা দাও।
সমিতিতে চাঁদা দাও।
অন্ধজনে দেহ আলো।’
দীনে দয়া করো।
অন্নহীনে অন্ন দাও।
সর্বভূতে দান করো।
গৃহহীনে গৃহ দাও।
জীবে দয়া করে সাধুজন।
বস্ত্রহীনে বস্ত্র দাও।
সম্প্রদান কারকের প্রয়োজন আছে কি?

শুধু সংস্কৃতের সঙ্গে মিল রেখে বাংলায় সম্প্রদান কারক রাখা হয়েছে। বিশিষ্টজনেরা এটিকে না রাখার মত দিয়েছেন। শুধু মাত্র ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এটি কে রাখার মত দিয়েছে। রাজা রামমোহন রায় তাঁর গৌড়ীয় ব্যাকরণে এর অস্তিত্ব স্বীকার করেননি। সুনীতি কুমার, ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও একই মত দিয়েছেন। কেননা এখন আর কোন কিছু সম্পূর্ণরূপে সম্প্রদান করা হয় না। যেমন কাউকে কোন কিছু দান করলে তা থেকে পুণ্য লাভের আশা থাকে।

Add a Comment