বহুব্রীহি সমাস

যে সমাসে সমস্যমান পদ গুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোন পদ (ব্যক্তি, বস্তু বা কোন বিষয়) কে বুঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

যথা: বহু ব্রীহি(ধান) আছে যার = বহুব্রীহি। এখানে ‘বহু’ কিংবা ‘ব্রীহি’ কোনোটিরই অর্থের প্রাধান্য নেই, যার বহু ধান আছে এমন লোককে বোঝাচ্ছে। পীত অম্বর যাহার = পীতাম্বর (অর্থ শ্রীকৃষ্ণ)। এই সমাসের ব্যাসবাক্যে একটি ‘যার’ শব্দের প্রয়োগ থাকে। অনুরূপভাবে দশভুজা = দশ হাত যার (দুর্গা)। দশানন = দশ আনন (মাথা) যার (রাবণ)।

উপরোক্ত প্রতিটি উদাহরণেই সমস্যমান পদগুলি ছাড়া অন্য কোনও অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে।

কয়েকটি নিয়ম
১. বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাকরূপে ব্যবহৃত হয়। যথা : আয়ত লোচনা যার = আয়তলোচনা (স্ত্রী), মহান আত্মা যার = মহাত্মা, স্বচ্ছ সলিল যার = স্বচ্ছসলিলা, নীল বসন যার = নীলবসনা, স্থির প্রতিজ্ঞ যার = স্থিরপ্রতিজ্ঞ, ধীর বুদ্ধি যার = ধীরবুদ্ধি।

২. ‘সহ’ কিংবা ‘সাহিত’ শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে ‘সহ’ ও ‘সহিত’ এর স্থলে ‘স’ হয়। যেমন : বান্ধবসহ বর্তমান = সবান্ধব, সহ উদর যার = সহদর > সোদর এরূপ সজল, সফল, সদর্প, সলজ, সকল্যাণ ইত্যাদি।

৩. বহুব্রীহি সমাসে পরপদে মাতৃ, পত্নী, পুত্র, স্ত্রী ইত্যাদি শব্দ থাকলে এ শব্দগুলোর সঙ্গে ‘ক’ যুক্ত হয়। যেমন : নদী মাতা (মাতৃ) যার = নদীমাতৃক, বি (বিগত) হয়েছে পত্নী যার = বিপত্নীক। এরূপ —সস্ত্রীক, অপুত্রক ইত্যাদি।

৪. বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদে ‘অক্ষি’ শব্দের স্থলে “অক্ষ’ এবং “নাভি” শব্দ স্থলে “নাভ” হয়। যেমন : কমলের ন্যায় অক্ষি যার = কমলাক্ষ(পদ্মের মতো চক্ষুবিশিষ্ট ব্যক্তি), পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ(বিষ্ণু)। এরূপ – উর্ণনাভ(মাকড়সা-অর্থাৎ নাভীতে উর্ণ বা জাল আছে যার)।

৫. বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘জায়া’ শব্দ স্থানে ‘জানি’ হয় এবং পূর্বপদের কিছু পরিবর্তন হয়। যেমন : যুবতী জায়া যার = যুবজানি (যুবতী স্থলে ‘যুব’ এবং ‘জয়া’ স্থলে জানি হয়েছে)।

৬. বহুব্রীহি সমাসে পরপদ যদি আ-কারান্ত হয় তবে সমস্ত পদে আ-কারটি বাদ যায়। যেমন : চন্দ্র চূড়া যার = চন্দ্রচূড়,
প্রতি প্রভা যার = প্রতিপ্রভ
বীত হয়েছে শ্রদ্ধা যার = বীতশ্রদ্ধ
ছিন্ন হয়েছে শাখা যার = ছিন্নশাখ
এভাবে কৃতবিদ্য, প্রাপ্তভিক্ষ, নির্লজ্জ, অসাড়, অসংখ্য ইত্যাদি।
কিন্তু
বিচিত্র কর্ম যার = বিচিত্রকর্মা। আ-কারের আগমন ঘটেছে।

৭. বহুব্রীহি সমাসে ‘সমান’ শব্দের স্থানে ‘স’ এবং ‘সহ’ হয়। যেমন: সমান কর্মী যে = সহকর্মী, সমান বর্ণ যার = সমবর্ণ, সমান উদর যাদের = সহদর।

৮. বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘গন্ধ’ শব্দ সত্থানে ‘গন্ধি’ বা ‘গন্ধা’ হয়। যথা : সুগন্ধ যার = সুগন্ধি, পদ্মের ন্যায় গন্ধ যার = পদ্মগন্ধি, মৎস্যের ন্যায় গন্ধ যার = মৎস্যগন্ধা।

Add a Comment